নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫৬ এএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেডিকেল সেন্টারের একটি নির্মিতব্য ভবনের নাম দেশের একজন শীর্ষ শিল্পপতির নামে করার কথা রয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য শিল্পপতির নামে ভবন নামকরণের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতামত উপেক্ষা করে শিল্পপতির নামে ভবন নামকরণের চূড়ান্ত অনুমতি দেয়ার চেষ্টা চলছে। ফলে এ নিয়ে ঢাবি সিন্ডিকেটের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে শিল্পপতির নামে ভবনের নামকরণ হলে দেশের অন্য শিল্পপতিরাও এভাবে নিজের নামে ঢাবিতে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দিতে পারেন। এতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই শিল্পপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ৬ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ৪ তলা ভবন নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি চিঠিতে মেডিকেল সেন্টার ভবনটি নিজের নামে নামকরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে এ বিষয়ে তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমওইউ স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছেন। ওই শিল্পপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
এ প্রস্তাবের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২৮ ফেব্রুয়ারির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় এজেন্ডায় উপস্থাপিত হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদসহ কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য ওই ব্যক্তির নামে মেডিকেল সেন্টারের নামকরণ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি চূড়ান্ত মীমাংসা ছাড়া অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়।
এদিকে অমীমাংসিত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার গত ১১ মার্চ ওই শিল্পপতিকে ভবন নির্মাণের অনুমতির কথা জানিয়ে চিঠি দেয়। চিঠিতে ভবনটি তার নামে নামকরণ করা হবে বলেও জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠির মাধ্যমে এই ব্যবসায়ী তার নামে একটি ভবন ক্যাম্পাসে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। চিঠিতে তিনি বলেছিলেন যে, পুরো মেডিকেল সেন্টারটির নামকরণের শর্তে চারতলা ভবন নির্মাণের ব্যয় তিনি বহন করবেন। তবে কর্তৃপক্ষ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছয় তলা বিল্ডিং স্পনসর করার জন্য বলেছিল এবং কেবল তার নামে এই নামকরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, পরবর্তী সিন্ডিকেটে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে; কিন্তু তা না করে প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পূর্বে শিল্পপতির নামে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়ে গত ১১ মার্চ চিঠি দিয়েছে। এরপর বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আমি আমার উদ্বেগের বিষয়টি উপাচার্যকে তাৎক্ষণিকভাবে ফোনে জানিয়েছি এবং এই অনুমতি যে বিধিসম্মত হয়নি, সেটিও তাকে জানিয়েছি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে মেডিকেল সেন্টারের ভবনের নামকরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর ঘটনায় উ?দ্বেগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারির সিন্ডি?কে?টের টেবিল এজেন্ডায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ভবন নির্মাণের বিষয়ে একজন শিল্পপতির প্রস্তাব এবং ভবনটি তার নামে নামকরণের বিষয়টি সিন্ডিকেটে উপস্থাপিত হয়। সেখানে অধ্যাপক সামাদ সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। এ সময় কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য তাকে সমর্থন করেন। পরে বিষয়টি চূড়ান্ত মীমাংসা ছাড়া অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসে সব স্থাপনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশের জন্য আত্মোউৎসর্গিত ও জ্ঞানচর্চার জন্য নিবেদিতপ্রাণ মহৎ ব্যক্তিবর্গের নামে নামকরণ করা হয়েছে। কাজেই শতবর্ষের ঐতিহ্যকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো স্থাপনা নামকরণের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষকদের নাম অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এ বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরে আনা অত্যাবশ্যক বলে অধ্যাপক সামাদ মনে করেন।
অধ্যাপক সামাদ চিঠিতে আরো লেখেন, যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান, অর্থ গ্রহণের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। দাতা সংস্থার অর্থের উৎস, জাতীয়-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান ও সামাজিক ভূমিকার ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করা একান্ত আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবল আগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সেখানে জাতির আশা-আকাক্ষা ও শত সংগ্রামের প্রতীক ঐতিহাসিক শহীদ মিনার এলাকায় একজন ব্যবসায়ীর নামে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ভবন’ নামকরণ করলে তা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এ পরিস্থিতিতে প্রধান প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত বিধি বহির্ভূত যে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্য প্রতি অনুরাধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির বলেন, সিন্ডিকেটে টেবিল এজেন্ডায় এ বিষয়ে আলোচনা উঠলেও অধিকাংশ সদস্য এটার বিরোধিতা করেছে। পরে এ আলোচনা সিদ্ধান্তহীনভাবে শেষ হয়েছে। কাজেই সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনি চিঠি দিতে পারেন না।