করোনার প্রথম রোগী শনাক্তের এক বছর আজ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ১১:১৮ এএম

৮ মার্চ ২০২০। সেদিন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের থেকে প্রথমবারের মতো জানানো হয়, বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ। 

এই ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে এক বছর। ভয়াবহ এক বছর মানুষের জীবনকে করেছে বিপর্যস্ত। 

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজনের দেহে নতুন করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা সরকার জানায়। এক বছর পর গতকাল রবিবার (৭ মার্চ) শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ, এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ হাজার ৪৫১ জন।

বিবিসি বাংলার  এক প্রতিবেদনে বলা হয়,  প্রথম দিকে মানুষের ছিল উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য না থাকা, গুজব, কোনো ওষুধ বা টিকা না থাকা সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা। অন্য দেশের মতো জাতিসংঘের নির্দেশে মানুষের শুধু করনীয় ছিল বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

সরকার প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় মার্চ মাসের ১৭ তারিখে। এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক বছরের বেশি সময় পর এখন খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার দাবি করছে, অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এই এক বছরে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফলতা দেখিয়েছে।

গত বছরের ২২ মার্চ সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। দেশে ‘লকডাউন’ প্রয়োগের সময়টিকে সরকারিভাবে ‘সাধারণ ছুটি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সারা দেশেই জরুরি সেবা, পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা ইত্যাদি অতিপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো ছাড়া গণপরিবহনও বন্ধ ছিল।

দেশজুড়ে এই ‘লকডাউন’ করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা, উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ ও ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল।

বিভিন্ন দেশের মতো দেশজুড়ে অবরুদ্ধকরণ না হলেও সারাদেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। সারাদেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একইসাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন অংকের মধ্যে থাকলেও সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।

২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়।

ধারণা করা হচ্ছিল- শীতকালে ভাইরাসের প্রকোপ আরো বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। নভেম্বরে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা ওপরে উঠলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত পড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে, দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম।

করোনা শনাক্তের এক বছর পর টিকা স্বস্তি দিলেও আবার সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মধ্যে এক ধরনের গাছাড়া ভাব চলে এসেছে, যা আশঙ্কার। এখন সংক্রমণ কমিয়ে রাখতে হলে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে যে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের উপর ওঠেছিল, তা এবছর ফেব্রুয়ারিতে ৩ শতাংশের নিচে নামলেও মার্চের প্রথম সপ্তাহে ওঠানামার মধ্যেও বেড়ে তা ৪ শতাংশের উপরে ওঠেছে।

যদিও এর মধ্যেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণহারে কভিড-১৯ টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। এক মাসে ৩৫ লাখের মতো মানুষ টিকাও নিয়েছেন। সংক্রমণের নিম্নগতি ও টিকা দেয়া শুরুর পর স্বাস্থ্যবিধি পালনে মানুষের মধ্যে ঢিলেমির ভাব এখন স্পষ্ট।

এক বছরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শুরুতে সংক্রমণ বাড়ার পর কমেছে। গত কয়েকদিন ধরে আবার সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ছে। সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে চলে গিয়েছিল। সেটা আবার পাঁচের কাছাকাছি চলে গেছে, যদিও এটা অল্প।

তিনি বলেন, আমরা শূন্যের কোঠায় আসতে পারি নাই। সংক্রমণের এটা একটা স্থিতিশীল অবস্থা। কিন্তু তাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও তুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

তিনি বলেন, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানি, আমরা যদি মাস্ক না পরি, কর্মস্থলে দূরত্ব বজায় না রাখি, তাহলে সংক্রমণটা আবার বেড়ে যাবে। সার্ভিলেন্স সিস্টেমটা ঠিক রাখতে হবে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, জিনোমিক সিকোয়েন্স করা দরকার। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এগুলো করা খুব দরকার। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh