নাসরীন জাহান
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:১৬ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১, ০৪:১৩ পিএম
দুপুরের খাইখাই রোদে
সাতটি দোযখ পাতা উড়ে গেলো,
একজন সশব্দে হিসহিসায়...অমাবস্যা!
সূর্যভয়ে চাঁদের অতলে পালিয়ে অমাবস্যা
ভয় পায় ভয়...
নিজেকে শান্ত-ভানে হিসহিসায়,
উল্লাস! উল্লাস!
চাঁদ মেঘকে পার্টনার বানিয়ে ফজর অপেক্ষায়
পূর্ণিমার গান গায়,
রাজার কড়া নির্দেশে পুরো রাজ্যে লকডাউন।
এই গিজগিজ ভিখিরি ভিড়ে
কীভাবে মানুষ দূরত্ব মেইনটেইনের নিয়ম মানে?
এই এলাকাতেও জলরঙ এর
ঝাঁকঝাঁক দস্যু করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে?
ফিসফিস টেনশানে একজনের ভয়ে
বাংলাকে বুকে বুকে জড়িয়ে কতজন যে সৃষ্টিকর্তা গায়!
আকালের খেয়াঘাট জানায়,
একরাতেই এই এলাকার পাঁচ রাস্তায় লকডাউন,
আষাঢ়ে হেমন্তের অপেক্ষায় কী ফলবতী?
দারোয়ান শিলালিপি জললিপি, রঙলিপি একাকারে
বলে, একেক বাড়িতে একাধিক ধরা পড়েছে।
এদেশের আঁচলে আগুন লেগে গেছে,
রক্ষা ছাড়া ভূপৃষ্ঠ পতন!
গার্মেন্টস-কন্যারা আজ ঘুটেকুড়ুনি...
নিঃসীমের ত্রাণ শেষে রক্তাভ রাজ্য-রাজা
অথবা একজনের মতো আরও অনেকজনেরা।
এ রাজ্যে খুনদৃশ্যে তামাশা হয়
ভিড় করে ভিডিও হয়, অট্রহাসি হয়,
কত কি যে রংমহলের রঙ-মঞ্চিয়া... হে,
নগরের তীব্র তেজ অথবা কম্বলহীন কনকনে শীতে বস্তি
কূলবর্তী ডুপ্লেক্স বাড়ির একজন, কড়াকড়ি যার শিহরণে মজ্জায়,
অস্তিত্ব কামড়ায় অহর্নিশ।
সেনিটাইজারের দুহাত সংগমে ফের সশব্দে...
সূর্য? চাঁদ? অমাবস্যা? নিরুত্তর গুমোট গাছ-দল!
ভালোভাবে হাত ধুয়েছ?
ফের একজনের কড়া কন্ঠে বুদবুদেরা ভয় পেয়ে অমাবস্যায় লুকায়...
আজান শব্দের স্রোত ধেয়ে কোরাস কাকেরা এগিয়ে আসে,
কী মনে হয় আপনার?
এদ্দিনেও আমরা চূড়ান্ত সচেতন থাকার নিয়মগুলো জানি না?
সারাবাড়িতে পোলাওয়ের নয় করোনার গন্ধ থইথই করছে!
পার্মানেন্ট বাবুর্চি এই বাড়িরই নিচতলার একটা রুমে থেকে
কোকিলের সাথে দারুচিনি মেশায়।
প্রেসার কুকার চিল্লায়...
দেয়ালের টিকটিকি মুহূর্ত ভয়ে পোকা ভুলে লাফ দেয়
মহা চিমনির ধোঁয়া গহব্বরে!
কেউ বলে চড়াস্বরে কে রে ইংলিশ ব্যান্ডের গান শুনছে?
তেপান্তরের আত্মা শুকিয়ে যায়!
অমাবস্যা এবার পৃথিবী প্রান্তে ধেই ধেই নাচে।
কোনো এক খুকুমণি জানালার গ্লাস এক চিলতে সরিয়ে,
কালও দেখেছে, রাস্তার কুকুরগুলো অভাত-ঘুমে,
কিন্তু সদ্য আছড়ে পড়া করোনা ভুতুদ্দমের ভয়ে
সে নড়াচড়া করতে পারেনি।
আজও কুকুরগুলো যেনবা মৃত্যুর আগে হালকা ঘোর খাচ্ছে।
নদীকূলে আর্তচিৎকার! ইসসস! সিরাপ!
যে কোনো নিয়ম বিরোধী এ ওর নিতম্বে ধাক্কা দিয়ে
অমবস্যা আর চন্দ্র কামড়ে চেঁচায়... উল্লাস!
সিরাপ না গো... ফেনসিডিল, খাবেন দাদারা খাবেন?
রাজ্য-বস্তির জলদানাহীন মাতাল!
ওদের নিঃসীম চোখ চাঁদ- ঝলসানো রুটিতে।
এসির মধ্যে জানালা খুলেছ?
ভাইরাসের বাতাস যদি ঢোকে? একজন ফের...
এভাবে ভাইরাস ঢোকে না, নিয়ম মেনে
চলার ব্যাপারটি একজন কে কাকে বোঝায়?
ভেতর বিরক্ত সরাবন তহিরা...
কেউ বালু কামড়ায়, অমাবস্যা চেঁচায়,
বাহুপ্রবাহের গুষ্ঠী কিলাই... জংলায় এতো মশামাছি,
শালা হিমালয়ে চলে যাব। কি, রে তুই কেলকেসিয়ান নাকি?
মোগো ভাষায় কতা ক...
খুকুমণি পাতিলের ঢাকনা খোলে ক্রমশ অমাবস্যা ভেঙে,
প্রেসার কুকারের হাড্ডি হাতায়।
ঘুর্ণনশীলতার চক্করে যখন চন্দ্রকুপি দিয়ে
সে কান্না কুকুরে সম্মুখে, জানা গেল,
সেই একজনের জানাজায় একজন কাকও আসেনি।
এমন সময়ে কারও মরতে আছে?
রাজাও শুনেছি মহা-জ্বরকাতর,
নিঃসীম নিঃসঙ্গ!
এরপর চাঁদ, অমাবস্যা, সূর্য পর্যন্ত
জট ভেঙে তুমুল বিচ্ছিন্নে অনন্তে ছিটকে পড়ে ।
ভূমণ্ডলে একটিই ব্যতিক্রম,
সূর্য এক নিয়মে ওঠে, চাঁদ এক নিয়মে নেভে।