লালমনিরহাটে মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতন মামলায় চেয়ারম্যান পলাতক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫৮ এএম

ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন

ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা নথিভুক্ত হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন ওই চেয়ারম্যান। 

গত রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত শেষে মামলাটি নথিভূক্ত করেন থানা পুলিশ।

এদিকে আজ মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ উপজেলা শাখা।

এর আগে গত শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের জাওরানী এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে ছেলের নামে চুরির অভিযোগ এনে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। আকবর আলী উত্তর জাওরানী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। আর মহির উদ্দিন ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

 বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী

জানা গেছে, ছেলের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ এনে পরিষদের চৌকিদার দিয়ে আকবর আলী ধনীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ও চৌকিদার ওই মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। বিষয়টি জানাজানি হলে চেয়ারম্যান এক পর্যায়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চাপে আকবর আলীর হাতের বাঁধন খুলে দেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় মাতব্বররা। চলে একের পর এক রফাদফা। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা নিজেই বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। 

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হাতীবান্ধা উপজেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হবে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগটি নথিভূক্ত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনীকে চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে মাটিতে বসিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে লোকজন ভিড় করলে তার হাতের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। 

আর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে কেঁদে ফেলেন আকবর আলী। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও চৌকিদার জোরপূর্বক আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকি। আমি এর সঠিক বিচার চাই। 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন (মুঠোফোনে) বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে কোনা মারধর করা হয়নি। তার ছেলে গরু চোর, সেজন্য তাকে ডাকা হয়েছিল। তবে আপনি তাকে বিচার সালিসের জন্য পরিষদে না নিয়ে নিজ বাড়িতে নিলেন কেন? তিনি এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। এছাড়া এর আগেও আপনি এক যুবককে তুলে এনে নিজ বাড়িতে নির্যাতন করেন এমন প্রশ্নের উত্তরও তিনি দিতে পারেননি।

উল্লেখ, ২০২০ সালের ১৬ মে নুরুজ্জামান নামে এক যুবককে চেয়ারম্যানের ওই বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের ছেলে জাহাঙ্গীর ও তার ভাই মনসুর হেলাল। আর সেই ঘটনার মমলায় বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh