সুমন সাজ্জাদ
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:০৭ পিএম
কত্ত রকমের জ্যুস আমাদের সামনে- ম্যাংগো জ্যুস, আপেল জ্যুস, মাল্টা জ্যুস ইত্যাদি। রসালো ব্যাপার-স্যাপারকে আমরা বলি juicy! জ্যুস যেখানে বিক্রি হয় তাকে বলি juice bar। ইংরেজি খাবার খেয়ে আর ইংরেজি সাইনবোর্ড পড়তে অভ্যস্ত এই আমাদের লিখে বোঝাতে হবে না যে, শব্দটি নেহায়েত ইংরেজি; কিন্তু ইংরেজি খাদ্য ভক্ষণ করলেই যেমন ইংরেজ হওয়া যায় না তেমনি ইংরেজির মতো শোনালেও তা ইংরেজি নাও হতে পারে; উৎস থেকে যেতে পারে অন্য কোথাও।
juice তেমনই একটি শব্দ। এর উৎস মূলত লাতিন ভাষায়- শব্দটি jus। যা কোনো কিছুর মিশ্রণ বা খাবারের তরল রূপ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। লাতিন থেকে গিয়েছে পুরনো ফরাশি ভাষায়; ইংরেজিতে হয়েছে juice। ইংরেজি ভাষায় ঠোঁটও বাদ যায়নি জ্যুসের হাত থেকে; কেননা অজস্র আলাপে শোনা যায় জ্যুসি লিপসের (juicy lips) স্তুতি।
কিন্তু... তারপরও ‘কিন্তু’ থেকে যায়। তাহলো, সংস্কৃত ভাষায় এরকম একটি শব্দ আছে- যূষ; এর দ্বারা বোঝায় খাবারের ঝোল। অবশ্য পীযূষ আবার অন্যকিছু- অমৃত, সুধা ইত্যাদি। উনিশ শতকের এক স্বল্পখ্যাত কবি বলদেব পালিত লিখেছেন, ‘আমায় পীযূষ রসের তুল্য/সুমিষ্ট লাগে তব রুষ্ট বাক্য।’ প্রিয়জনের তিক্ত শব্দও মধুর লাগে। বিশেষ করে, যারা জেনে শুনে জ্যুস করেছে পান।
তারপরও আরেকটা ‘কিন্তু’ আছে। এই কিন্তুটা একদমই আঞ্চলিক; বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে যে কোনো ধরনের তরকারির ঝোল বোঝাতে ‘জুশ’ শব্দটি বলা হয়ে থাকে; যেমন ধরা যাক, ‘জুশ নিবাইন?’ কিংবা ‘জুশের মইদ্যে নুন কম অইছে ক্যারে?’ আমার দাদি ঝোল বোঝাতে ‘জুশ’ বলতেন। বহু বছর বাদে অভিধান উল্টাতে গিয়ে দেখি পূর্ববাংলার শূদ্র বাঙালরা কবে যেন কেটেছেঁটে যূষকে জুশ রূপে বদলে নিয়েছে। দাদি যদি বেঁচে থাকতেন আর দেখতেন বোতল ভর্তি juice বিক্রি হচ্ছে, তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হতেন এই ভেবে যে, ‘বুত্তল ভইরা জুশ আবার বেচে ক্যামনে!’
অতএব, এটাই বোঝা গেল juice, যূষ, জুশ- তিনটিই juicy আর কাছাকাছি ধ্বনির হলেও স্বাদ আলাদা। দয়া করে এটা ভেবে বসবেন না যে, লাতিন থেকে লঙ্কা- লাফ দিয়ে যূষ আর জুশ হয়েছে। শুধু হুঁস করে খানিকটা মনে রাখলেই হবে, গ্রিক, লাতিন ও সংস্কৃত ভাষার পারস্পরিক প্রেম ও বিচ্ছেদের ইতিহাস আছে। juice, যূষ, ‘জুশ হয়তো ওই সম্পর্কেরই দাগ-চিহ্নমাত্র।