করোনা মোকাবিলায় সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হই

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৪৮ এএম

ছবি: স্টার মেইল

ছবি: স্টার মেইল

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাই সত্যি হতে চললো। শীত শুরু হতে না হতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত  মৃত্যুরে সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তারপরও আমরা কতটুকু সচেতন এই ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য? 

নিজের পরিচিত মানুষজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সাংবাদিক ও শো বিজের তারকাদের করোনায় আক্রান্তের খবর পাচ্ছি। যাদের কয়েকজনের সাথে আমার খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল কাদের গণি, সঙ্গীত শিল্পী বেবি, অভিনেতা আলী যাকের করোনায় আক্রান্ত। আমার খুব প্রিয় বড় ভাই অভিনেতা আজিজুল হাকিম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে নিয়ে সবাই খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। তিনি এখন সুস্থ আছেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছেন। একটু স্বস্তি লাগছে। 

আতংকে আছি কোন সময়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি। করোনার শুরু থেকেই পেশাগত কারণে অফিস করছি। বাইরে বের হতে হচ্ছে। তবে যতটুকু সম্ভব নিজেকে সুরক্ষা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি একা নিজেকে কতটুকু সুরক্ষা করতে পারবো? আশেপাশের পরিচিত অপরিচিত মানুষগুলো যদি স্বাস্থ্য সচেতন না হয় তাহলে এটা আদৌ সম্ভব হবে না। 

আমার এলাকা পুরান ঢাকা থেকে মালঞ্চ বাসে আসার সময় বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করলাম বাসচালক আর হেলপার দুজনের কেউই মাস্ক পরা নয়। বাস যাত্রীরা কয়েক বার মাস্ক পরার কথা চালক হেলপারকে বলার পরও কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ করলেন না দুজন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় পথচারীদের মাস্ক পরতে বাধ্য করার জন্য পুলিশ মাঠে নেমেছে। যাদের কাছে মাস্ক নেই তাদের একশো টাকা জরিমানা করা হচ্ছে, আর একটি মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছে। গণপরিবহনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকার কথা ছিলো। কিন্তু এখন এটি কোনো চালক হেলপার মালিক মানছেন না। গত কয়েকদিন আগে সিলেট গিয়ে দেখেছি পর্যটন জায়গাগুলোতে অধিকাংশ পর্যটকের মুখে মাস্ক ছিলো না। পুলিশ বারবার সতর্ক করার পরও সেদিকে কারো নজর নেই। 

মানুষ এখন করোনাকে খুব স্বাভাবিকভাবে দেখছে। সামাজিক দূরত্ব মানছে না। রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। লোকসমাগম বাড়ছে একটু একটু করে। আমরা মাস্ক পরছি না পরার মতো। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। কিসের সচেতনতা? সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বারবার হাত ধোয়া, সামাজিক নিরাপত্তা  মেনে চলা, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সরকারি নির্দেশনাগুলোকে মেনে চলা। আমরা খুব দুর্ভাগা জাতি সব সমসয় সুযোগের সদ্বব্যবহারের অপেক্ষায় থাকি। করোনার প্রথম ঢেউয়ে ১০ টাকার মাস্ক ৩০০ টাকাতেও কিনতে হয়েছে, অন্যান্য উপকরণগুলোও কিনতে হয়েছে চড়া মূল্যে। করোনা টেস্ট নিয়ে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ভঙ্গুর চিত্র ফুটে উঠেছে । 

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে কথা হচ্ছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতকে কতটুকু ঢেলে সাজানো হয়েছে? সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরাও নিজেদের দায়িত্ব, সচেতনতা কতটুকু পালন করছি? গত কয়েক মাস মাস্কের দাম কমে এসেছিলো। ১০ টাকায় তিনটি মাস্ক পাওয়া যেত বাসগুলোতে হকারের মাধ্যমে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে মাস্কের দামও বাড়ছে। বাড়ছে অন্যান্য অনুষঙ্গের দামও। তাই হয়তো মানুষ এসব ব্যবহার করতে বিরক্ত প্রকাশ করছে। জরিমানা করেও মাস্ক পরাতে পারছে না। অনেকের সাথেই কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে ।  

সবাই আতংকে আছেন আবার কেউ কেউ আতংকে নেই। কিন্তু তারপরও কিছুটা শঙ্কা কাজ করে। আমিও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি যেকোনো সময়, আবার আপনিও হতে পারেন। তাই সরকারের স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি আমাদেরও সচেতনতা আরেকটু বাড়াতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা নিজে যেমন মেনে চলি সেদিকটা গুরুত্ব দিতে হবে। ঠিক তেমনি আমাদের পরিবার, প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজন, চারপাশের মানুষজনকেও সচেতন থাকার পরামর্শ দিই।

আসুন সবাই মিলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে বেশি বেশি নিজেকে সক্রিয় রাখি। নিজে সুরক্ষিত থাকি। আশেপাশের মানুষদেরকেও সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বটা নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh