মাস্ক আর হাত ধোয়া আটকে দেয় গলাব্যথা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১০:১৭ এএম

ভোর রাতে বাতাসে ঠান্ডা আমেজ, আসছে শীত। প্রতিবারই ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকের গলায় ব্যথা হয়। কিন্তু এবছরে সব কিছুই অন্য রকম। গলা ব্যথা বা জ্বর হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। 

আসলে ঋতু পরিবর্তনের এই  সময়টায় নানান রোগ জীবাণু বেড়ে ওঠে। সুযোগ বুঝলেই আক্রমণ করে। জ্বর-সর্দি আর গলাব্যথা এখন বলতে গেলে ঘরে ঘরে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ইএনটি সার্জেন দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় জানালেন, গলাব্যথা ও অল্প জ্বর মূলত টনসিলাইটিস ও ফ্যারেঞ্জাইটিসের উপসর্গ। আমাদের নাকের ঠিক পেছনেই শ্বাসনালীর সামনে থাকে টনসিল আর ফ্যারিংস। এরা শরীরের পাহারাদারের কাজ করে। বাইরের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে গেলে তাদের সাথে লড়াই করে। নাক-মুখ দিয়ে আমরা যে বাতাস টেনে নিই তার সাথে কিছু জীবাণুও থাকে। টনসিল জীবাণুদের শ্বাসনালীতে ঢুকতে বাধা দেয়। কিন্তু অনেক সময় জীবাণুদের কাছে এরা যুদ্ধে হেরে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই সময়টায় ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াদের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। আর সংক্রমিত মানুষের হাঁচি, কাশি বা কথা  বলার মাধ্যমে এই জীবাণুগুলো ছড়িয়ে পড়ে ঠিক নভেল করোনাভাইরাসের মতোই।

তিনি বলেন, মহামারি প্রতিরোধে সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস কিন্তু টনসিলের অসুখ বা ফ্যারেঞ্জাইটিসের মতো গলাব্যথার সমস্যা আটকে দিতে পারে। এবারো প্রচুর মানুষ গলা ব্যথার সমস্যা নিয়ে আসছেন। কভিডের ভয়ে সামান্য উপসর্গ দেখলেই মানুষজন আতঙ্কিত হচ্ছেন। অথচ নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরার অভ্যাস করলে এই সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকে। যারা সদ্য কভিড থেকে সেরে উঠেছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বেশি সাবধানতা নেয়া উচিত।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ঠান্ডা লাগলে টনসিলের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাচ্চাদের মধ্যেও টনসিলাইটিসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। স্কুল বা খেলাধুলা বন্ধ থাকায় শিশুদের মধ্যে ঝুঁকি অন্যবারের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বড়দের থেকে বাচ্চাদের ও উল্টোটা হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

তিনি বলেন, গলাব্যথা, খাবার গিলে খেতে অসুবিধে হওয়া, জ্বর, টনসিল লালচে হয়ে ফুলে ওঠা, মাথা ও ঘাড়ের যন্ত্রণার মতো উপসর্গ দেখা গেলে এবং দুই/তিনদিনের মধ্যে সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে। কভিড-১৯ সংক্রমণ ছাড়াও এই সময়টায় ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার কারণেও জ্বর হচ্ছে। তাই তিনদিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত ডা. পল্লবের পরামর্শ।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায়ের পরামর্শ, জ্বর আর গলাব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া চলবে না। শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ও গরম পানিতে গার্গল ও প্রয়োজন হলে ভেপার নিয়ে হবে। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলে রক্তের প্লেটলেট কমে গিয়ে ভয়ানক বিপদের ঝুঁকি থাকে। কোনো সংক্রমণ হলেই আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম চেষ্টা করে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুদের শরীরের বাইরে বের করে দিতে। আর এই জন্যেই ইনফেকশন হলে জ্বর হয়। 

টনসিলের ইনফেকশন হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জি থেকে। অ্যান্টিবায়োটিক আর প্যারাসিটামল খেলে দু’তিন দিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়। 

ডা.পল্লব জানান, মূলত ৫-১৫ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে টনসিলাইটিসের সমস্যা বেশি দেখা যায়। ছোঁয়াচে এই অসুখের হাত এড়াতে ভিড় বাজার দোকান বা বাসে ট্রামে নাক মুখ ঢেকে থাকাই সব থেকে ভাল উপায়। আর সংক্রমণ হলে ২-৩ দিন বিশ্রাম নেয়া উচিত। খাবার খেতে অসুবিধে হয় বলে নরম ও গরম খাবার খেলে ভাল। ভাত, ডাল, দুধ, রুটি, চিকেন বা সবজির স্ট্যু, ডিম- সবই খাওয়া যায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এসি ব্যবহার, ঠান্ডা জল বা বোতলবন্দি ঠান্ডা পানীয় না খাওয়া উচেত। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh