বুড়িমারীতে পুড়িয়ে হত্যা: আরো দুই আসামি গ্রেফতার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৪৪ পিএম

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে আলোচিত যুবক জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও পুড়িয়ে মারার তিন মামলায় আরো দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার ৩৮ জন।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ওমর ফারুক।  

গ্রেফতার দুইজন হলেন- জেলার পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বাবলা (২৬) ও বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা সোনারভিটা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জিএম মানিক (৪৫)।

নিহত যুবক সাহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক।

ওসি ওমর ফারুক বলেন, বহুল আলোচিত সাহিদুন্নবী জুয়েল হত্যায় দায়ের করা পুলিশের ওপর হামলা ও ইউপি ভবনে হামলার মামলায় অজ্ঞাত আসামি বাবলা ও মানিককে রবিবার (২২ নভেম্বর) রাতে বুড়িমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্তে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতার সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা বলে জানায় পুলিশ। যার মধ্যে ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ।

আবু কালাম ওরফে গামছা কামাল নামে আরো এক জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি বুধবার (২৫ নভেম্বর) দিনধার্য করেছেন আদালত। এর মধ্যে মামলা মূল আসামি বুড়িমারী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটর এবং মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীসহ চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
 
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর জুয়েল যোবাইয়ের আব্দার নামে এক সঙ্গীকে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে ওপর পড়ে যায়। সে সময় কোরআন ও হাদিস বই তুলে চুম্বন করে যথাস্থানে রেখে দেয় জুয়েল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মুয়াজ্জিনের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে ছুটে যান।  

এদিকে সূর্য ডোবার সাথে সাথে পুরো বাজার ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। সে সময় উত্তেজিত কয়েকশত বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে হিঁচড়ে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয় তারা। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দেয় ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ১০টা দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং নিহত জুয়েলের সঙ্গী যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh