এমপিও নীতিমালা সংশোধনের পূর্বে খসড়া প্রকাশ করা উচিত

মো. রহমত উল্লাহ্

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১৬ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩৭ পিএম

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা সংশোধন কার্যক্রম চলছে বর্তমানে। জানা যাচ্ছে, প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে এমপিও নীতিমালা সংশোধনের কাজ। একদিকে কাজ করছে কমিটি অন্যদিকে আলোচনা সমালোচনা করছেন শিক্ষকরা। কোন বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে তা অগ্রিম জানার আগ্রহ সবার। এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটির বেসরকারি সদস্যরাও বিভিন্ন আলোচনায় এসে দিচ্ছেন কিছু কিছু তথ্য। 

পত্রপত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতিতে অনুপাত প্রথা আর থাকবে না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট শিক্ষকের ৫০ পার্সেন্ট সহকারী অধ্যাপক হবেন। এই সংবাদে খুশি হচ্ছেন শিক্ষকরা। কেননা, এই অনুপাত প্রথা বাতিলের দাবি দীর্ঘদিনের। অপরদিকে বিভিন্ন আলোচনায় শোনা যাচ্ছে, এই পদন্নতির ক্ষেত্রে ২:১ নীতি অনুসরণ করা হতে পারে। যদি তাই হয় তো আবারো জটিলতা তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকবে। যেমন, বিদ্যমান নীতিমালায় ৫:২ নীতি অনুসরণ করে মোট (৫+২) ৭ জন শিক্ষক থেকে ২ জনকে সহকারী অধ্যাপক করা হচ্ছে। আসন্ন সংশোধিত নীতিমালায় যদি আগের হিসাব কৌশল অনুসারে ২:১ নীতি প্রণয়ন করা হয় তো মোট (২+১) ৩ জন শিক্ষক থেকে ১ জন সহকারী অধ্যাপক হতে পারবেন। যা মোট শিক্ষক সংখ্যার ৫০% হয় না, ৩৩.৩৩% হয়। এমতাবস্থায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুপাত প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল করে শুধুমাত্র শতকরা হার প্রবর্তন করাই উত্তম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং সহকারী অধ্যাপক এর পাশাপাশি সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করার দাবি জানাচ্ছি। 

এছাড়াও শোনা যাচ্ছে, ইন্টারমিডিয়েট কলেজ/ আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক পদ বিলুপ্ত করে সিনিয়র প্রভাষক পদ সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাস্তবে যদি তাই হয় তো এটি হবে শিক্ষকদের মধ্যে আরো এক নতুন অসন্তোষের কারণ। এ পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যদি সহকারী অধ্যাপকের পদ বিলুপ্ত করা হয়,  তাহলে যারা বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক পদে আছেন তাদের অবস্থান কী হবে? তারা কি আবার সিনিয়র লেকচারার হয়ে যাবেন? কী অপরাধে তাদের পদাবনতি হবে? যদি তাই হয় তো তারা এটিকে মেনে নিবেন কীভাবে? সিদ্ধান্তটি যদি এমন হয় যে, যারা সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন তারা এ পদেই থাকবেন, কিন্তু নতুন করে আর কেউ সহকারী অধ্যাপক হতে পারবেন না তো নতুনদের মনের অবস্থা কেমন হবে? তারাই বা এটিকে মেনে নিবেন কীভাবে? আসলে কোন যুক্তিতে কী হচ্ছে, তা আমরা জানিনা। এক্ষেত্রে যদি এমন ভাবা হয় যে, ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের সব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেহেতু সহকারী অধ্যাপকের পদ নেই, সেহেতু এই লেভেলের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তা থাকা উচিত নয়; তাহলে ডিগ্রি লেভেলের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ দেয়া উচিত। 

বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির বিষয়েও শোনা যাচ্ছে অনেক কথা। বিদ্যমান এমপিও নীতিমালা ২০১০ এ বলা আছে, সরকার ইচ্ছা করলে নীতিমালা প্রণয়ন করে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করতে পারেন। অসহনীয় কষ্টে নিমজ্জিত বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকরা প্রত্যাশা করছেন, এমপিও নীতিমালা সংশোধনের জন্য গঠিত বর্তমান কমিটি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে বদলির ব্যবস্থা করবেন। সরকার চাইলেই তারা তা করতে পারবেন, সরকার না চাইলে তাদের কিছুই করার থাকবে না। এদিকে উচ্চ আদালত সম্প্রতি একটি রায়ে বলেছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য সুযোগ দিতে হবে। 'বদলি' বা 'প্রতিষ্ঠান বদল' যে নামেই হোক শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত সুবিধাজনক এলাকায় গিয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ দেয়া সরকারের দায়িত্ব। নীতিমালার জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই নীতিমালা।

অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে নিয়মিত  নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান অংশের পূর্ণ বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা এবং এমপিওভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। অথচ তাদেরকে এমপিওভুক্ত করার কোনো প্রস্তাব নীতিমালায় যুক্ত করা হচ্ছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার বলা যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন চাকরি করার পরও এমপিওভুক্ত হবার কোনো সুযোগ তারা পাবেন না- এটি খুবই কষ্টকর বিষয়। শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মতিক্রমে তাদেরকে এমপিওভুক্ত করার জন্য নীতিমালায় প্রয়োজনীয় ধারা সংযুক্ত করা আবশ্যক।

এমপিও নীতিমালা সংশোধন সংক্রান্ত এমন আরো অনেক বিষয় আছে যা নিয়ে বিভিন্ন কথা হচ্ছে। তাই এই সংশোধন চূড়ান্ত করার পূর্বে একটি খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের জানিয়ে, বুঝিয়ে, মানিয়ে নেয়াই উত্তম। কেননা, এটিতো শিক্ষা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থেই করা হচ্ছে। শিক্ষার সংজ্ঞা অনুসারে শিক্ষার্থীদের "সুস্থ দেহে সুস্থ মন" গঠন নিশ্চিত করার জন্যই দূর করতে হবে শিক্ষকগণের মনের কষ্ট। তা না হলে শিক্ষক সমাজ যদি এক বা একাধিক বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন; তবে কমবেশি বিনষ্ট হবে "শিক্ষা বান্ধবখ্যাত" বর্তমান সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ।


লেখক: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, অধ্যক্ষ
কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ
মোহাম্মদপুর, ঢাকা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh