করোনার এক বছরে বিশ্বে আক্রান্ত সাড়ে ৫ কোটি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২০, ১১:১২ এএম

গত বছরের ১৭ নভেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে থাবা বসিয়েছিল করোনাভাইরাস। তখন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। এরপর কেটে গেছে এক বছর। এখন গোটা বিশ্বে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ কোটির বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ।

বেশ কয়েকটি রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ওই দিন ৫৫ বছর বয়সি এক ব্যক্তির দেহে প্রথম এই ভাইরাসের সন্ধান মেলে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই সংখ্যাটা ২৭ জনে পৌঁছায়, ২০ ডিসেম্বরে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৬০ জনে। আর ২০২০ সালের ১ জানুয়ারিতে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩৮১। উহানকে করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করার পরই ২৩ জানুয়ারি সেখানে লকডাউন জারি করা হয়।

ভয়ানক ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে- এই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন লি ওয়েনলিয়াং নামে চীনেরই এক চিকিৎসক। অভিযোগ- তাতে কর্ণপাত করেনি প্রশাসন। বিষয়টি চেপে যাওয়ারও অভিযোগ ওঠে। উহানে যখন সংক্রমণ ও মৃত্যুও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল, চীন প্রশাসন তখন ঘোষণা করে নতুন একটি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ততদিনে উহানে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে। চীনের অন্য প্রদেশগুলো থেকেও সংক্রমণের খবর আসতে শুরু করে। চীন তখন একে একে বিভিন্ন প্রদেশে লকডাউনের পথে নামে। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বছরের শুরুতেই করোনা সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে যায় চীন।

ততদিনে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও থাবা বসাতে শুরু করে দিয়েছে করোনা। ১০ ফেব্রুয়ারিতে গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যাটা পৌঁছয় ৪২ হাজার ৮০০। ১ মার্চের মধ্যে এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল সংক্রমণ। দৈনিক আক্রান্তও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল মৃত্যুর সংখ্যাও। ২৬ মার্চ ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা। ততদিন দৈনিক আক্রান্ত ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছিল প্রায় ৩ হাজার মানুষের।

একে একে ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি করোনার হটস্পট হয়ে ওঠে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর যত সময় গড়িয়েছে সংক্রমণ তত তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়, যে চীন থেকে করোনার সূত্রপাত তারাই এই মহামারিকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। 

ততদিনে ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভারতসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও সংক্রমণ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। 

জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের আজ বুধবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক এ মহামারিতে আক্রান্তের হার দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৪৩ হাজার ১২২ জন। আর বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৮ জনে। ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৬ জন। 

একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যায়। আজ পর্যন্ত শীর্ষস্থানেই রয়েছে দেশটিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭১১ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ২৫৫ জনের।

সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৯ লাখ ১২ হাজার ৯০৭ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩১ জন মানুষ।

ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯ লাখ ১১ হাজার ৭৫৮ জন। মারা গেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৪ জন মানুষ।

তালিকায় ফ্রান্সের অবস্থান চতুর্থ, রাশিয়া পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্পেন। আর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৪তম। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় যে বিষয়টি তা হলো, এই এক বছরের মধ্যে চীন সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষ স্থান থেকে ৬০ নম্বর স্থানে নেমে এসেছে। মৃত্যুর নিরিখে ৩৬তম স্থানে রয়েছে তারা।

করোনার উৎস কী এখনো তা নিয়ে নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। প্রথম দিকে যেমন জল্পনা চলছিল চীনে উহানের ল্যাব থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। বায়োকেমিক্যাল অস্ত্র তৈরি করতে গিয়েই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এই তথ্যকে চীন যেমন মান্যতা দেয়নি, তেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই অভিযোগগুলোকে নস্যাৎ করেছে।

শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে এই করোনা। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের উপর প্রভাব পড়ছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান সব কিছু যেন এক লহমায় ওলোটপালট করে দিয়েছে ভাইরাসটি। গোটা বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।

করোনার কবল থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন দেশে টিকা তৈরির কাজও চলছে। কিন্তু কবে এই মহামারি থেকে মুক্তি মিলবে এখন সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। -আনন্দবাজার পত্রিকা ও ওয়ার্ল্ডোমিটার

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh