ন্যাটো মিত্রদের সাথে দ্বন্দ্বে হুমকিতে তুরস্কের অর্থনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০১:২৮ পিএম

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান

করোনাভাইরাস মহামারির পর ন্যাটো জোটের মিত্রদের সাথে তুরস্কের বিরোধের জের ধরে ডলারের অনুপাতে তুরস্কের মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান সাম্প্রতিক বক্তব্যে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশের সাথে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি করেছেন।

বিশ্লেষকরা তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি (গত মাসে ১১.৭%) ও সুদের হার বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অসম্মতির বিষয়টিকে কারণ মনে করছেন। সুদের হার বাড়ানো মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারে ও তুরস্কের মুদ্রা লিরা কিনতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন লিবিয়া, সিরিয়া, সাইপ্রাসের আশেপাশে ও ককেশাস অঞ্চলে তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের শক্তি প্রদর্শনের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এক তুর্কী নাগরিক বলেন, তুরস্কের মুদ্রা লিরা দুর্বল হয়ে যাওয়ার পেছনে নতুন কারণ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তৈরি হওয়া ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা।

তুরস্কের রাবো ব্যাংকের একজন বিশ্লেষক পিওতর ম্যাটিস বলেছেন, তুরস্কের ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন বিজয়ী হলে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ (অ্যান্টি এয়ারক্রাফট) মিসাইল সিস্টেম কেনার কারণে বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। পাশাপাশি 'তুরস্কের সাথে ফ্রান্সের দ্রুত অবনতি হওয়া পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিও বাজারে উদ্বেগের কারণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এই বছরে তুরস্কের মুদ্রা লিরা ২৬% মান হারিয়েছে এবং তুরস্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,  মুদ্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৮ মাসে তারা ১০ হাজার কোটি ইউরোর বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।

২৩ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিশ্চিত করেছেন, তুরস্ক বিতর্কিত এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের পরীক্ষা চালিয়েছে। রাশিয়ার সাথে অস্ত্র চুক্তি করার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের যে সমালোচনা করেছিল, সেটির জবাবে রবিবার এরদোয়ান বলেছেন, আপনি জানেন না আপনি কার সাথে খেলছেন। আপনার যত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দিতে পারেন।

তুরস্ক মিসাইল সিস্টেমটি চালু করলে নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুতর পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

তুরস্কের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কিন্তু সাইপ্রাসে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়ায় ইইউয়ের নেতারা এরদোয়ানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সংস্থাটির এক সম্মেলনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংস্থাটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম উস্কানিমূলক ও একতরফা।

করোনাভাইরাসও তুরস্কের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। একদফা খারাপ পরিস্থিতি পার করে আসার পর তুরস্কের করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও গত কিছুদিন ধরে ইউরোপের অন্যান্য জায়গার মতো আবারো সেখানে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে।

পাশাপাশি লিরার দরপতন ঠেকাতে শত শত কোটি ডলার বিক্রি করে দেয়ায় তুরস্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বছরেই তুরস্কের অর্থনীতির বড় ধরণের সংকোচন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তুরস্কের ব্যবসায়িক মিত্র রাশিয়ার সাথে এরদোয়ানের সম্পর্কের উষ্ণতাও ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেকটাই শীতল হয়েছে। লিবিয়া ও সিরিয়ায় চলমান দ্বন্দ্বে তুরস্ক ও রাশিয়া বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে। আবার আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা নাগরনো-কারাবাখকে কেন্দ্র করা যুদ্ধে তুরস্ক সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে। -বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh