বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০৭:২০ পিএম | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০৭:২২ পিএম
অনেকের ধারণা স্ট্রোক হচ্ছে হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যা। কিন্তু এটি আসলে মস্তিষ্কের একটি রোগ। এতে রক্তনালির জটিলতার কারণে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের একাংশ কার্যকারিতা হারায়। আমাদের দেশে স্ট্রোকের হার প্রতি হাজারে ১২জন। দেশের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ স্ট্রোকের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অধ্যাপক আতা এলাহী খান সেমিনার হলে এক কর্মশালায় বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিলেন রেডিয়ান ফার্মাসিটিকালস।
কর্মশালা পূর্ব সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউরোসাইন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন, নতুন পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, ঢামেক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. আহমেদ হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে রফিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রোক বিশ্বে দ্বিতীয় প্রধান মৃত্যুর কারণ। এ কারণে লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। স্ট্রোকের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, চোখে ঘোর দেখা, চেহারা পরিবর্তন হওয়া, বাহু অবশ হওয়া, কথা বলার সময় জড়তা চলে আসা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে গোল্ডেন টাইমের মধ্যে (৩ থেকে ৪ ঘণ্টা) চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ঢাকা মেডিকেল স্ট্রোকের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসর হয়েছে। ইমার্জেন্সি বিভাগের পাশে একটা সিটি স্ক্যান ও ক্যাথল্যাব বসানো হয়েছে। এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে অনেক কিছু চাইলেই হতো না। কিন্তু এখন সরকার আমাদের সবকিছু দিচ্ছে। আমি যখন শুনি, এখানে স্ট্রোক ইউনিট নাই তখন অবাক হই। কেননা এরফলে তো রোগী মারা যাবে। সময় থাকতেই আমাদেরকে সবকিছু করতে হবে।
কর্মশালায় বলা হয়, প্রতি ৬ সেকেন্ডে বিশ্বে একজন অর্থাৎ মিনিটে ১০জন লোক স্ট্রোকের কারণে মারা যায়। প্রতি বছর ১৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে ৫ মিলিয়ন মারা যায় এবং পাঁচ মিলিয়ন মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করে। আর বাকি পাঁচ মিলিয়ন মানুষ সুস্থ হয়। কিন্তু সচেতন হলে বড় একটি অংশকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
কর্মশালায় ঢাকা মেডিকেলের নিউরোসার্জেন্সি বিভাগের শিক্ষকরা বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ বা আমেরিকাতে ৪২ শতাংশ রোগী কমেছে। কিন্তু অনুন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই রোগ শতভাগ বেড়েছে।
স্ট্রোকের প্রতিকার সম্পর্কে শিক্ষকরা বলেন, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। স্ট্রোক সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য। এরজন্য ফাস্টফুড খাবার ত্যাগ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে অবহেলা না করে হাসপাতালে নেয়া ও সর্বোপরি জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ।