ইউজিসির প্রতিবেদনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান রাবি ভিসি

এম ওবাইদুল্লাহ, রাজশাহী

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০৪:১০ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে ও পক্ষপাতমূলক দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন উপাচার্য।

রবিবার (২৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন উপাচার্য। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতা পায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য দাবি করেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসনের (সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন) বিভিন্ন দুর্নীতির খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেটা সম্পর্কে উপাচার্য হিসেবে আমি অবহিত নয়। তবে ইউজিসি তদন্ত কমিটির সদস্যদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত খবরগুলো জনমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য দেশের মানুষ ও সরকারের কাছে আমার অবস্থান স্পষ্ট করার অনুভব করছি।

উপাচার্য বলেন, যেকোনো আমলযোগ্য অভিযোগের তদন্ত বাঞ্ছনীয়। আমি তদন্তের বিরুদ্ধে নয়। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসমূহ যথাযথ হলে তদন্তে আমার একশভাগ সম্মতি আছে তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আইনসিদ্ধভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে। এই বিষয়ে আমি গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসির চেয়ারম্যানকে পত্র দিয়ে জানিয়েছিলাম। আমি আশা করেছিলাম সেই পত্র বিবেচনায় নিয়ে চেয়ারম্যান পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু তা বাস্তবে ঘটেনি। বরং আমি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বলাবাহুল্য প্রতিবেদনটি একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক সুতরাং আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সমূহের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, আমি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বড় বড় আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকাস্থ অতিথি ভবন ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে হেকেপ প্রকল্পের সাড়ে ৩ কোটি টাকা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লক্ষ টাকা তছরুপের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করি। এসব অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগসমূহ উত্থাপন করেছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ১৯৮৫ ও ১৯৯২ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী ২০১২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম চালু ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর সনাতন পদ্ধতির সাথে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জিপিএ সংযোজনপূর্বক শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা ২০১২ সালের ১০ মে তারিখের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়। সাবেক উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দীন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু পরে তিনি ২০১৪ সালে তার কন্যার এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-কে ভিত্তি ধরে শুধুমাত্র ইংরেজি বিভাগের নিয়োগে যোগ্যতা পুননির্ধারণ করেন। তাঁর কন্যাকে ২০১৪ সালের নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় ২০১৫ সালে সিন্ডিকেট সভায় সকল বিভাগ ইনস্টিটিউটের জন্য অতি উচ্চযোগ্যতা সম্পন্ন নিয়োগ নীতিমালা অনুমোদিত হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করা হয়েছে।


অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রণীত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অতি উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। এসব বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার জন্য প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অনুরোধ করে। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পুনরায় নির্ধারণের জন্য ২০১৭ সালে ৭ সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভা অনুমোদনক্রমে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা প্রণীত হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দিয়ে এই নীতিমালা যথাযথ অনুসরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়নি দাবি করে উপাচার্য বলেন, ২০১৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ২৪টি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে কয়টি বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নীতিমালা সম্পর্কে কোনো আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষক সমিতির অনুরোধের প্রেক্ষিতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সে নিয়োগ নীতিমালাকে জামাই ও মেয়েকে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া যদি ইউজিসি তদন্ত কমিটি এমন মন্তব্য করে থাকে তাহলে সেই তদন্ত পক্ষপাতহীন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

ইউজিসির শুনানিতে না যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সোবহান বলেন, রীতি অনুযায়ী তাদের ঘটনাস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত কাজ করার কথা। যেটা ইউজিসি এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই করেছে। রাবির ক্ষেত্রে তাঁরা করোনা পরিস্থিতির কথা বলে আসতে অপরগতা জানিয়েছেন। তাহলে একই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত রাবির উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কীভাবে ঢাকায় গিয়ে তদন্তে সহায়তা করতে বলেন? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কী এতোটাই গুরুত্বহীন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?

প্রতিবেদনে নানা অজুহাতে বাড়ি দখলে রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর আমি অধ্যাপক হিসেবে যে বাড়িটি বরাদ্দ পেয়েছিলাম, সেখানেই ছিলাম। উপাচার্যের বাসভবনে উঠি নাই। যখন উপাচার্যের বাসভবনে উঠেছি, তখনই ওই বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছি। অথচ ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্য অভিযোগ করেছে- উপাচার্যের বাসভবন এবং অধ্যাপক হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাড়িটি আমি একই সময়ে দখলে রেখেছি। যেটা পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh