সংসদ সদস্য পদ হারাতে পারেন নিক্সন চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৫৬ পিএম

সংসদ সদস্য পদ হারাতে পারেন ফরিদপুর ৪ আসনের এমপি নিক্সন চৌধুরী। শুধু সংসদ সদস্য পদ নয়, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ হলে হতে পারে সাজা ও আর্থিক দণ্ডও। সংসদ সদস্য হিসেবে তার এমন আচরণ সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে নিজের লোককে ছাড়িয়ে নিতে জেসমিন সুলতানাকে ফোন করেন সাংসদ মুজিবর রহমান। নির্বাচন শেষে রাতে বিজয় সমাবেশে চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসককেও। এই দুই ঘটনার অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

যদিও অডিওটি বানোয়াট বলে দাবি করেন মুজিবর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ জানান, হুমকি দেওয়ার যে অডিও ভাইরাল হয়েছে, তা সুপার এডিটেড।

তবে এ ঘটনায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর জেলা শাখা সভা করে প্রতিকার চায়। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিক্সন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) হুমকি ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ অক্টোবর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রথমবারের মতো কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন। চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিল উত্থাপনের পর ১০ বছরেও কার্যকর হয়নি সংসদ সদস্য আচরণ আইন। বাড়ছে আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা। এ ধরণের স্পর্শকাতর ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন এবং একইসঙ্গে সংসদ সদস্য আচরণ আইন কার্যকরেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে একই স্থান ও সময়ে দুই দলের সমাবেশ ডাকায় ফরিদপুরের সদরপুরে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা সদরের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকার সভা সমাবেশ বা জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

শনিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা হতে পরেরদিন রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার এ তথ্য জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি গ্রুপ শনিবার সকালে ১০টার দিকে পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ ডাক দেয়ায় এ ব্যবস্থা নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে সদরপুর ইউএনও পূরবী বলেন, যেকোনো প্রকার অনভিপ্রেত পরিস্থিতি রোধে সদরপুর উপজেলা সদরের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাউকে এ সীমানার মধ্যে সভা সমাবেশ বা জমায়েত করতে দেয়া হবে না।

এমপি নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার ও মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সদরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান এক সমাবেশের ডাক দেন। অন্যদিকে নিক্সন চৌধুরীর গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সমাবেশের ডাক দেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সায়েদিদ গামাল লিপু।

সদরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুর বলেন, সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার ও মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সদরপুর স্টেডিয়ামে স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে শনিবার সকালে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লিপু জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক সদরপুর স্টেডিয়ামে শনিবার সকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh