করোনাভাইরাস

সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২৬ পিএম

দেশের জনসাধারণের মধ্যে শৈথিল্য আসার কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে উল্লেখ করে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলছে, এটি মোকাবিলার জন্য রোডম্যাপ তৈরি ও পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে।

গত তিন সপ্তাহ ধরে দেশে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের নিচে নেমে এসেছে, অর্ধেকে নেমে এসেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কম হলেও পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও নেমে এসেছে দৈনিক ১০% এর কাছাকাছিতে।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবারই (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতকালে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

আর এদিন রাতেই নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, রোডম্যাপ তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির এসব সুপারিশ নিয়ে আজ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) একটি জরুরি বৈঠক করবে বলেও জানা গেছে।

দেশে গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে মোট তিন লাখ ৪৮ হাজার ৯১৬ জন ও মোট মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৯৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। মে, জুন, জুলাই মাসে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার করে রোগী শনাক্ত হলেও এই মাসে প্রতিদিন রোগী শনাক্তের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারে নেমে এসেছে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটি মনে করে, সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও এখনো হার স্বস্তিকর পর্যায়ে যায়নি।

কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। বৈদেশিক যোগাযোগ উন্মুক্ত হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরণের শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশেও পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি সংক্রমণ হলে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে পরামর্শক কমিটি। এছাড়া দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয় করার জন্যও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

যেহেতু জীবিকার স্বার্থে লকডাউন সম্ভব নয়, তাই একটি কার্যকর টিকা না পাওয়া পর্যন্ত নিরাপদ থাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই কভিড-১৯ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় বলে মন্তব্য করেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এই কমিটি।

দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয় এর জন্য আরো বেশি করে টেস্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পরামর্শক কমিটি। এছাড়া জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় এক্স-রে, রক্তের কিছু পরীক্ষার সম্প্রসারণ করা জরুরি বলে মত দিয়েছে।

কমিটি বলছে, কভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইসোলেট করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ প্রবেশ পয়েন্টে প্রতিরোধ কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। 

হাসপাতালে যে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। কারণ স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার-পরিজনও কভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। সেইসাথে রোগীদের তথ্য বিনিময় করার জন্য আন্তঃ হাসপাতাল রেফারেল নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটি মনে করে, সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও এখনো হার স্বস্তিকর পর্যায়ে যায়নি। তাই হাসপাতালে কভিড-১৯ শয্যা সংকোচন করা হলেও পুরোপুরি বন্ধ না করে ভবিষ্যতে যাতে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সদ্য সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সানিয়া তাহমিনা বলছেন, কভিড-১৯ এর সংক্রমণ কিন্তু গত বছর শুরু হয়েছিল শীতকালেই, ডিসেম্বর মাসে। তখন দেখা গেছে, শীতপ্রধান দেশগুলোয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে সারা বিশ্বেই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, শীতকালে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আসছে শীতে করোনাভাইরাস মহামারি আরো মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে শীতের আগে থেকেই উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে।

কিন্তু শীতকালের সাথে করোনাভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের জন্য বিশেষ করে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিশেষ অনুকূল বলে দেখা গেছে। সূর্যের আলোয় যে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে তা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু শীতের সময় অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণও কম থাকে।

ড. সানিয়া বলছেন, তাপমাত্রায় এই ভাইরাসটি বাড়ে, সহজে সংক্রমিত করতে পারে বা নিজের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে, শীতকাল সেটার জন্য আদর্শ। এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে যে, শীতকালে এই ভাইরাসের বিস্তার বেশি হতে পারে। -বিবিসি বাংলা


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh