করোনাভাইরাস

পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার জন্যই কি বিপদে ইউরোপ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩৯ এএম

গরম বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনে একটি সমুদ্র সৈকতে উপচে পড়া ভিড়। ছবি: গার্ডিয়ান

গরম বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনে একটি সমুদ্র সৈকতে উপচে পড়া ভিড়। ছবি: গার্ডিয়ান

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেই যে বিপদ কেটে গেছে, এমনটা ভাবার কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ নিয়ে বারবার সতর্ক করে চলেছে। 

কিন্তু সেই কথা কানে না-তোলার অন্যতম উদাহরণ ইউরোপ। সামনেই শীত। স্রেফ কথা না শোনায় আরো বড় মাসুল দিতে হতে পারে ইউরোপকে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। 

সংক্রমণ কমতেই ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে শুরু করে দিয়েছিল ইউরোপ। খুলে দেয়া হয়েছিল স্কুল। এমনকি পর্যটনকে চাঙ্গা করতে ইউরোপের মধ্যে সফরে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেয়া শুরু করেছিল হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। এ বিষয়ে সাহায্য করেছে সরকারও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচারও করেছে তারা। যেমন- নির্দিষ্ট কোনো একটি হোটেলে উঠলে মাথাপিছু ৫০ ইউরো ছাড়। দীর্ঘ চার-পাঁচ মাস ঘরবন্দি থাকার পরে তাই গরমের ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। 

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এতেই ইউরোপজুড়ে বেড়েছে করোনারা সংক্রমণ। 

স্কুল খুলতে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যায়।  স্কুলে সহপাঠী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়েছে স্পেনের রাজকন্যাকেও। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনে দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ৫০ হাজার ছুঁয়েছে, মৃত্যুও বাড়ছে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) দেয়া তথ্য তেমনটাই বলছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুলনা করলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কম। কিন্তু দেশগুলোর জনসংখ্যা অনুযায়ী বিচার করলে- ইউরোপে মৃত্যুহার ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। ইউরোপের জনসংখ্যা ৭৫ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যা ৩৩ কোটি। যে সময়ে ইউরোপে সংক্রমণ ঘটেছে ৪৪ লাখ ও মৃত্যু দুই লাখ ১৭ হাজারের বেশি, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০ লাখ ৪ হাজার ৭৬৮ জন আর মৃত্যু দুই লাখ ৪ হাজার ১১৮ জন।

পর্যবেক্ষক সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মৃত্যুহার ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৬৩ জন। স্পেনে সেখানে ১০ লাখে মারা গিয়েছেন ৬৫২ জন, ফ্রান্সে ৪৭৯ জন, ব্রিটেনে ৬১৪ জন ও ইতালিতে ৫৯১ জন। 

প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা লঘু করতেই সপ্তাহান্তে বিচ-পার্টি করা শুরু করে দিয়েছিল ব্রিটেনবাসী। পাবগুলোতে উপচে পড়ছিল ভিড়। এ ধরনের বেপরোয়া কাজকর্মকেই কাঠগড়ায় তুলেছে ব্রিটিশ প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার ঘোষণা করেছে, কোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে তাকে ও তার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের নজরে রাখা হবে। তাদের পুরোপুরি আইসোলেশনে থাকতে হবে। নিয়ম না মানলেই এক হাজার পাউন্ড থেকে ১০ হাজার পাউন্ড জরিমানা। কোরো দরিদ্র ব্যক্তি ঘরবন্দি হয়ে পড়লে তাকে ৫০০ পাউন্ড অর্থসাহায্য করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। 

ফ্রান্সেও সব পর্যটনস্থল খুলে দেয়া হয়েছিল। সেন নদীর তীরে উপচে পড়ছিল ভিড়, প্যারিসের রাস্তায় অসংখ্য মানুষ... এভাবেই দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আগেও একদিনে এত সংক্রমণ ঘটেনি। 

নেদারল্যান্ডস প্রশাসন বলছে, এভাবে চললে তাদেরও দিনে সংক্রমণ ১০ হাজার ছাড়াবে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ শাখার প্রধান হান্স ক্লুগ জানাচ্ছেন, মার্চেও এই ছবি দেখেনি ইউরোপ। এর অন্যতম কারণ হলো সংক্রমণ রুখতে যে সব নিয়ম জারি করা হয়েছিল, একটু সেরে উঠতেই তা তুলে নিয়েছিল ইউরোপ। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh