কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি মঞ্চনাটক

ওবায়দুল হক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:০৪ এএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের মতো মহামারির দুঃসময় স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রায় পাঁচ দশকের থিয়েটারের পথচলায় কখনো আসেনি। কর্মহীন হয়েছেন কয়েক হাজার মঞ্চশিল্পী। নাটকের নিষ্ক্রিয়তায় পার করছেন বিষন্নতার দিনরাত্রি। ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়ে অনেকে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। 

ভিন্ন পেশার রোজগার থেকে মঞ্চনাটকের স্রোতধারা সচল রাখা এসব শিল্পী ভুগছেন প্রবল মানসিক যন্ত্রণায়। শুধু মঞ্চের মোহে অন্য পেশায় প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় কেউবা রয়েছেন অস্তিত্ব সংকটে। 

চলতি বছর সর্বশেষ মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকার মঞ্চে নাটক দেখেছে দর্শক। তারপর পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরুলেও নাটকের দেখা নেই ঢাকাসহ সারাদেশের নাট্যমঞ্চে। পেশাদারিত্বের পরিবর্তে মঞ্চশিল্পীর শ্রম-ঘাম আর ভালোবাসায় গড়া শিল্প মাধ্যমটি দাঁড়িয়েছে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। প্রাপ্তির বদলে হৃদয়ে বাজছে শূন্যতার সুর। 

এদিকে নাটক মঞ্চায়ন থেমে গেলেও মহড়া কক্ষ কিংবা কার্যালয় চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কয়েকটি নাট্যদল। প্রতীকী প্রতিবাদের পাশাপাশি আয়ের উৎস খুঁজতে নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর চালু করেছে থিয়েটার ভ্যান। কিছুদিন আগেও সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির সামনে থাকা সেই ভ্যানে সবজি বিক্রি করেছেন নাট্যকর্মীরা। এখন অনলাইনে চলছে সেই কার্যক্রম। সব মিলিয়ে করোনাকালে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি মঞ্চনাটক।  

সারাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক নাট্যদল যুক্ত রয়েছে নাট্যচর্চায়। এর মধ্যে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত নাট্যদলের সংখ্যা ৩৮৬টি। রেপার্টরি দলের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। আর গ্রাম থিয়েটারের সাথে যুক্ত আছে ২৬২টি দল। অধিকাংশ নাট্যকর্মীর আয়ের উৎস ছিল গান ও নাচ শেখানো, টিউশনি কিংবা ছোটখাটো চাকরি। এমনকি পাঠাও বা উবার রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে জীবিকা চালিয়ে অনেকে যুক্ত ছিলেন থিয়েটার চর্চায়; কিন্তু মহামারির কারণে বেকারত্বের কষাঘাতে ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই। 

এর মধ্যে সহস্রাধিক শিল্পী এককালীন পাঁচ হাজার টাকা করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেয়েছেন। থিয়েটার স্বজনসহ আরও দু-একটি সংগঠনের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হলেও তা জীবন চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এই প্রেক্ষাপটে মঞ্চের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা মানুষগুলো জানেন না, আবার কবে মঞ্চে মেলে ধরবেন নিজেকে। কবে ঘুচবে দুর্দশা। করোনাকালে কিছু অনলাইন মহড়া বা আলোচনা অনুষ্ঠান হলেও সেখানে মিলছে না থিয়েটারের প্রকৃত স্বরূপটি।

মহামারি করোনাকালে মঞ্চনাটকের স্থবিরতায় অনেকের মতোই আশাহত মামুনুর রশীদ। আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা এই অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও নাট্যকারের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রকাশ পায় সেই বেদনার সুর। এই নাট্যজন বলেন, মূলত মঞ্চনাটককে ঘিরেই ছিল আমার জীবনের ব্যস্ততা। এখন তা থেমে গেছে। আগে মঞ্চকে ঘিরে সারাদিন কাজের চাপে দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। আর এখন কর্মহীনতা কেড়ে নিয়েছে চোখের ঘুম। মঞ্চে দাঁড়াতে না পেরে বিভিন্ন নাট্যদলের ছেলেমেয়েরাও খেই হারাচ্ছে নিরাশার চোরাবালিতে। 

কভিড-১৯ সংক্রমণের অব্যাহত ধারায় ২০২০ সালে নাটক মঞ্চায়নের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে জানালেন রামেন্দু মজুমদার। তিনি বলেন, ‘এ বছর আর কোনো নাটক মঞ্চস্থ হবে না বলে আমার ধারণা’। তাছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় দেড়-দুই ঘণ্টার মঞ্চনাটক দেখার বিষয়ে দর্শকরাও খুব একটা আগ্রহী হবেন না। মঞ্চশিল্পীদের জন্য এটা অনেক বড় দুঃসংবাদ। তবে সংকট কেটে গিয়ে এক সময় আবার সুদিন আসবে। সেই সুসময়ের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া এখন আর উপায় নেই।

থিয়েটার বাঁচাতে হলে এখনই নাটক মঞ্চায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের কর্ণধার মীর জাহিদ বলেন, হাট-বাজার থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, বিপণিবিতান, শপিংমল সবই খুলে গেছে। চলছে গণপরিবহন। এসব জায়গায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে। তাহলে মঞ্চনাটক কেন বন্ধ থাকবে?

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh