আবারো পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ

কথা রাখলো না ভারত

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:১১ পিএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:২১ পিএম

বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পাঁচ দিন পর শনিবার আটকে পড়া পেঁয়াজ রফতানি শুরু করে সে দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বেনাপোল বন্দর দিয়ে আজ রবিবার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্যের স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্য শুরু হলেও বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আটকে পড়া পেঁয়াজের কোনো ট্রাক দেয়নি ভারতীয় কাস্টমস। 

কবে নাগাদ আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ওপারের রফতানিকারকরা। তবে নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সত্যতা নিশ্চিত করে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ভারত সরকার গত সোমবার হঠাৎ করে কোনো কিছু না জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিলো। এরপরে শুক্রবার একটি নোটিফিকেশন জারি করে যে, গত রবিবার টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো তারা রফতানি করবে। সেই মোতাবেক অনুমতি দেয়ায় শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। 

এরমধ্যে ভারত যে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ রফতানি করেছে, তার অধিকাংশ পেঁয়াজই ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে পানি ঝরছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ কারণে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ নিয়ে এসেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হারুন উর রশীদ জানান, এখনো দুইশর বেশি পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের এলসি দেওয়া রয়েছে, তার বিষয়ে  কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এগুলোর বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা কী করবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি। আজকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ প্রবেশ করবে কিনা সেই বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

এদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে যেসব পেঁয়াজের এলসি করা ছিলো, মূলত সেসব পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছিলো ভারত সরকার। এ কারণে শনিবার বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ টন পেঁয়াজ রফতানি করা হয়েছে। বাকি যে ১০ হাজার টনের জন্য এলসি করা আছে, সেসব পেঁয়াজ রফতানির জন্য নতুন করে ভারত সরকারের অনুমতি লাগবে। এখন পর্যন্ত অনুমতি না হওয়ায় আজ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি করা হবে না।

ভারতের রফতানিকারক ভজন দাস জানিয়েছেন, পেঁয়াজের পূর্বের রফতানি মূল্য ২২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে প্রতিটন ৭৫০ মার্কিন ডলারে নতুন করে এলসি দেয়া হলে তারা পেঁয়াজের রপ্তানি করতে পারবে।

জানা গেছে, বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আটকে থাকা ট্রাকের পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ ভাগ পচে যাওয়ায় পেঁয়াজের ট্রাকগুলো গত বৃহস্পতিবার রাতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে রপ্তানিকারকরা। তারা লোকাল বাজারে ও বিভিন্ন আড়তে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে তাদের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আকছির উদ্দীন মোল্লা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজের কোনো গেটপাশ না আসায় এ পর্যন্ত বেনাপোল বন্দরে কোনো পেঁয়াজ ঢোকেনি। ওপারে এখনও কিছু ট্রাক আটকা আছে শুনেছি। তবে ভারতীয় কাস্টমস আটকে থাকা পেঁয়াজ দিলে তা দ্রুত খালাসের জন্য কাস্টমস প্রস্তুতি রয়েছে।

পেঁয়াজ আমদানিকারক হামিদ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি সরোয়ার জনি জানান, বারবার প্রতিশ্রুতি ভাঙায় এ পথে এখন পেঁয়াজের আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদেরকে আর বিশ্বাস করা যায় না। এখন নতুন করে আর পেঁয়াজের এলসি খুলবেন কিনা সংশয়ে পড়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভারত বাণিজ্যিক চুক্তি লঙ্ঘন করে অনেক ব্যবসায়ীকে পথে বসালো। প্রতিবেশী বন্ধু দেশের কাছে এমন আচরণ আমরা আশা করিনি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, যেভাবে নাটক করে পেঁয়াজের চালান আটকে রেখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করলো তাতে ভারতের সঙ্গে পেঁয়াজের বাণিজ্য বন্ধ রাখা উচিত। সরকারের উচিত এসব খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে বাইরের দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক মজবুত করা। যাতে ভারতের সামনে এ ধরনের কোনো সংকট তৈরি করলে বিকল্প পথ যেনো খোলা থাকে।

এদিকে, পেঁয়াজ না ঢোকায় খোলা বাজারে কমেনি দাম। এখনো প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ চাহিদা মতো কিনতে না পেরে বেকায়দায় পড়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh