সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:০৪ পিএম
করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারের তরফ থেকে শিল্প, সেবা, কৃষিসহ অন্যান্য খাত যতটুকু মনোযোগ পেয়েছে, সে তুলনায় শিক্ষা খাত প্রায় অবহেলিতই ছিল বলা যায়। মার্চের ১৭ তারিখের পর থেকে বিগত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখার তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
অতি সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসা ছাড়া দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর আগে এ বছর পিইসি পরীক্ষা না নেয়ার কথা জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এপ্রিলে নির্ধারিত এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে, তা নিয়ে এখনো সংশয়ের নিরসন হয়নি। খুব সামান্য পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও, সারাদেশে তা খুব কার্যকর নয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি খাতে পড়ালেখা করছে। এর মধ্যে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ। স্কুল-কলেজ বিক্রির মতো ঘটনাও ঘটছে।
করোনাকালে দেশের শিল্প, সেবা, কৃষিসহ অন্যান্য খাত নিয়ে যত আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে, শিক্ষা খাত নিয়ে তার সামান্য পরিমাণও হয়নি। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখা সরকারের জন্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবচেয়ে জরুরি বিষয় শিক্ষা ক্ষেত্রকে করোনাকালের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো কার্যকর পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। এমনকি মন্ত্রিপরিষদের সভায় সিনেমা হল বাঁচানোর প্রস্তাব উঠেছে; কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সহায়তা প্রদানের কথা কেউ বলেননি।
বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলদেশের অগ্রগতি অন্যান্য দেশের জন্য ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে, বিশেষ করে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে। করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের অর্জন ও সাফল্যকে ধরে রাখা খুব সহজসাধ্য হবে না; কিন্তু সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে ঝুঁকির মুখে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।
সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন; কিন্তু এমপিওভুক্ত নয় এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের অনেকেই মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ আমাদের দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের অবদান কম নয়। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি, সরকারি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষকদের কথা মাথায় রেখে সরকারকে শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থা নিরসনে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।