সাগরের ইলিশে সয়লাব বরিশালের মোকাম

খান রুবেল

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫২ এএম

ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

হঠাৎ করেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে বেড়ে গেছে ইলিশের আমদানি। সাগর থেকে ট্রলার ভরে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। সেই সাথে কমে গেছে ইলিশের দামও। মাত্র একদিনে মণ প্রতি ইলিশের দাম কমেছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এর ফলে হাসি ফুটেছে ক্রেতাদের মুখে।

তবে মোকামে ইলিশের আমদানি বাড়লেও হাসি নেই বিক্রেতা অর্থাৎ আড়তদারদের মুখে। একদিকে বিদেশে রফতানি বন্ধ অন্যদিকে ক্রেতা সংকট। তাই মোকামের ইলিশ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে রফতানিতে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর পোর্ট রোডস্থ ইলিশ মোকাম ঘুরে দেখা যায়, পুরো মোকাম জুড়েই ইলিশের হাঁকডাক। সাগর থেকে আসা একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে মোকামে। ট্রলার থেকে ইলিশ খালাসে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মৎস্য শ্রমিকরা। কিছু শ্রমিক ট্রলার থেকে ইলিশ খালাশ করছে, কিছু শ্রমিক ব্যস্ত আকার অনুযায়ী মাছ বাছাইয়ের কাজে। আবার অনেকে ব্যস্ত বরিশালের বাইরে ইলিশ রফতানির জন্য প্যাকেজিং এবং তা ট্রাকে লোড করতে। মোট কথা ইলিশের আমদানির ফলে দম ফেলানোর সুযোগ পাচ্ছে না শ্রমিকরা।

এদিকে ইলিশের আমদানি বৃদ্ধির কারণে পোর্ট রোডের পুরানো চিত্র ফুটে উঠেছে। খুচরা বিক্রেতারা হাঁকডাক মেরে বিক্রি করছেন ইলিশ। সেই সাথে দাম কমার খবরে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা লাইন দিয়ে এসেছেন চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ কিনতে। পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের এমন চিত্র দীর্ঘ দিন পরে বলে দাবি করেছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

পোর্ট রোড মোকাম থেকে ইলিশ ক্রয় করা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ ইউনুস খান বলেন, মোকামে ইলিশের দাম বিগত দিনের তুলনায় অনেক কম। আমরা ছয়জন মিলিয়ে গড়ে ১৮টি ইলিশ মাছ কিনেছি তিন হাজার টাকায়। প্রতিটি ইলিশের ওজন এক কেজির ওপরে হয়েছে।


এদিকে পোর্ট রোডের আড়তদার তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. কবির হোসেন বলেন, গত তিন/চারদিন ধরেই মোকামে ইলিশের আমদানি বেশি। বিশেষ করে শুক্রবার আমদানি ছিলো তুলনামূলক বেশি। তাই বিক্রিও হয়েছে পানির দরে।

শুক্রবার এক কেজির ওপরে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা দরে। যার প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার টাকায়। একদিন আগে গ্রেড সাইজের এই ইলিশের মন ছিলো ৩৬ হাজার টাকার উপরে এবং খুচরা মূল্যে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১শত থেকে ১২শত টাকায়।

এছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ খুচরা ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকা ও পাইকারী প্রতি মণ ২২ হাজার টাকা, যা পূর্বের দিনে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়। ৫শ থেকে ৮শ গ্রামের প্রতিমণ ১৮ হাজার ও খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা। পূর্বের দিনের মূল্য ছিলো প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা। প্রতি মণ জাটকা (৩শ থেকে ২৫০ গ্রামের উপরে ৪শ গ্রাম পর্যন্ত) প্রতি মণ ১০ হাজার ও খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২৫০ টাকা। একদিন আগে যার প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। সামনের ইলিশের মূল্য আরো কমবে বলে মনে করেন কবির।

অপরদিকে বরিশালের সর্ববৃহৎ ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডের আড়তের ইজারাদার ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নীরব হোসেন টুটুল বলেন, ইলিশের আমদানি বেড়েছে কয়েকগুন। শুক্রবার মোকামে সর্বোচ্চ তিন হাজার মণের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে। যা বর্তমান মৌসুমের সর্বোচ্চ। এ কারণে ইলিশের দামও অনেক কমে গেছে।

তিনি বলেন, মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, অবরোধ কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় নদী ও সাগরে ইলিশের পরিমান যেমন বেড়েছে তেমনি জেলের জালে ধরাও পড়ছে। যদিও বর্তমানে মোকামে যত ইলিশ আসছে তার সিংহভাগই সাগরের ইলিশ। নদীর ইলিশও কিছু আসছে। তবে সেটা তুলনামুলক কম। এ কারণে সাগরের মাছের তুলনায় নদীর ইলিশের দাম একটু বেশি।


এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ইলিশের আমদানি বেড়লেও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই। কারণ ক্রেতার সংখ্যা কম। এমন পরিস্থিতি যে ফ্রিজিং করারও কোনো সুযোগ নেই। কেননা বাংলাদেশে ফ্রিজিং করা মাছের চাহিদা নেই। তার ওপর বিদেশে ইলিশ রফতানিতেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ফ্রিজিং করে তা রফতানি করা যেত। সেটা সম্ভব না হওয়ায় ইলিশ পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা যারা দাদন নিয়ে ব্যবসা করছি তারা মাঠে মরার উপক্রম ঘটেছে। বাধ্য হয়ে পানির দামে ইলিশ বিক্রি করায় পাওয়া টাকাই পরিশোধ করতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে রফতানিতে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবিও জানান এই মৎস্য ব্যবসায়ী।

এদিকে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তার মধ্যে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে জেলেরা ১৭-১৮ দিন সমুদ্রে যেতে পারিনি। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ অনেক বড় হয়েছে।

তিনি বলেন, মধ্যে ইলিশ ধরার দুটি জো ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় দুটি জোতেই ইলিশ শিকার হয়নি। এখন যখন জেলেরা ইলিশ শিকার করতে যাচ্ছে সব ইলিশ একসাথে ধরা পড়ছে। তাই মোকামগুলোতে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। কমেছে সাগরের ইলিশের দামও। তবে নদীর ইলিশ এখন উঠতে শুরু করেনি। নদীর ইলিশের দামও বেশি। কিছুদিনের মধ্যে নদীর ইলিশের আমদানিও বেড়ে যাবে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh