মানুষতো জোর করে গান শোনে না: সামিনা চৌধুরী

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৩ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৪ এএম

সামিনা চৌধুরী

সামিনা চৌধুরী

এই সময়টা কীভাবে কাটছে?

আমার অবশ্য তেমন একটা হেরফের হয়নি। আগে যেমন কাটতো এখনো তেমনই কাটছে। তবে এখন আম্মার বাসায় যাওয়া হচ্ছে না। আগে সবার সাথে দেখা হতো এখন হচ্ছে না, কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এই সময়ের একটা ভালো দিকও রয়েছে। এখন আমরা সবাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকছি।

আপনার বাবা এদেশের একজন কিংবদন্তি গায়ক। বাবাকে নিয়ে কিছু বলুন।

এরকম আর আসবে না। তার ভিতরটা ছিল শিশুর মতো সরল। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন খুব ভালো মানুষ। আর তার কণ্ঠে যে মাধুর্য ছিল, মুগ্ধতা ছিল তা সেই সারল্য, ভালো মানসিকতা আর শুদ্ধতারই প্রতিফলন।

এ দেশে শিল্পীদের কতটুকু মূল্যায়ন হয় বলে আপনি মনে করেন?

শুধু শিল্পী না, কোনোকিছুরই মূল্যায়ন সেভাবে হয় না কিংবা অনেক পরে হয়। একবার কোনো কিছু জনপ্রিয় হলে তা নিয়ে মাতামাতি করি কিন্তু সঠিক মূল্যায়ন করি না। আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেট পরিচিত বলে ক্রিকেট নিয়ে আমাদের এত মাতামাতি। কিন্তু আমরা আমাদের দেশের ফুটবলের খোঁজ রাখি না। আমাদের ফুটবলারদের চিনিও না। আমাদের যে জাতীয় খেলা কাবাডি সেটা নিয়েও তেমন আগ্রহ দেখাই না। অথচ ইন্ডিয়া কিন্তু এর মধ্যে কাবাডিকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমার হলিউড অস্কারের খবর ঠিকই রাখি; কিন্তু নিজেদের খবর নেই না। একজন সামিনা চৌধুরীকে তৈরি করতে আমরা কিছুই করি না; কিন্তু একজন সামিনা চৌধুরী তৈরি হয়ে গেলে তাকে নিয়ে আমাদের মাতামাতির শেষ নেই। 

মাঝখানে দীর্ঘ সময় প্লেব্যাকে ছিলেন না। এর কারণ কী? 

পলিটিক্সের শিকার হয়েছিলাম। কয়েকজন সিনিয়র নারী শিল্পী পলিটিক্স করল। আমি কারও সাথে যোগ-বিয়োগ করতাম না। তাছাড়া কেউ আমার পিছে লাগলে আমি তার পিছে লাগতে যেতাম না। কারণ আমার মা-বাবার একটা পরিচয় ছিল। তাছাড়া আমি মৌলিক সুর, মৌলিক গানের পক্ষপাতি ছিলাম। হিন্দি গানের সুর নকল ভালো লাগত না। আর পত্রিকা এগুলোকে অতিরঞ্জিত করে নিউজ করেছিল। বানিয়ে লিখেছিল। সুরকাররা রাগ করেছিল। তখন আমার বয়স অল্প ছিল। তারা সবাই সিনিয়র ছিলেন। এসব মিলিয়ে প্লেব্যাকে অনিয়মিত হয়ে যাই। 

ক্ষুদে গানরাজ, ক্লোজাপ ওয়ানসহ বেশকিছু রিয়েলিটি শোতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রিয়েলিটি শো সম্বন্ধে আপনার বক্তব্য কী?

রিয়েলিটি শো ভালো। রিয়েলিটি শো না হলে আমরা জানতামই না যে আমাদের দেশে এত প্রতিভা রয়েছে। তবে প্রতি বছর এত প্রতিভা বের হয় যে, ওরা নিজেদের সংস্থান করতে বিপদে পড়ে যায়। ওদের তো বিজয়ী করে ছেড়ে দেয়া হয়। পরীক্ষায় পাস করেছ এবার চাকরি খুঁজে নেয়ার মতো। ফলে ওরা নিজেদের ভিড়ে নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিতে বিপদে পড়ে যায়। সেজন্য রিয়েলিটি শোগুলো বছর বছর না হয়ে দু’এক বছর পরপর হলে ভালো হবে।

এখন একটি শ্রোতাপ্রিয় গান পেতে আমাদের অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

জানি না রে। (কিছুক্ষণ থেমে) ভালো কথা ও সুরের অভাব। আর ভালো কথা ও সুরের যে গানগুলো হচ্ছে, সেগুলো ঠিকভাবে প্রচার হচ্ছে না। অন্যদিকে মানহীন কথা ও সুরের গানগুলো টাকার জোরে প্রচার করা হচ্ছে, টাকা খরচ করে সেগুলোর মিউজিক ভিডিও বানানো হচ্ছে। এক কথায় পাবলিককে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে; কিন্তু মানুষতো জোর করে গান শোনে না। সেজন্যই এই অবস্থা। এ ছাড়া ভালো কথার সাথে ভালো সুর ও ভালো কণ্ঠের সংমিশ্রণটাও এক্ষেত্রে খুব জরুরি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh