খান রুবেল
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:৩০ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:০৮ পিএম
সবুজের পটভূমিতে লালের অপরূপ সৌন্দর্য্য। বিলজুড়ে শুধু রঙিন শাপলার বর্ণাঢ্য উৎসব। যা দেখতে দূরদূরন্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। লাল শাপলায় ছেয়ে থাকা এই বিলের অবস্থান বরিশাল শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নে। প্রায় দুই শত একরজুড়ে বিস্তৃত বিলটির নাম সাতলা।
লাল শাপলার প্রতি আকর্ষণ সব চেয়ে বেশি। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ফুটতে শুরু করে প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত বিল-ঝিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় এ লাল শাপলা। এতে পুরো এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় এক নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
প্রতিদিন বরিশালসহ বিভিন্ন উপজেলার ভ্রমণ পিপাসুরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য লাল শাপলার বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য স্বচোখে প্রত্যক্ষ করতে। বিলের সৌন্দর্য্য উপভোগের উপযুক্ত সময় ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত। তবে, পড়ন্ত বিকেলে শাপলার রূপ-সৌন্দর্য বেশি। সূর্যের তেজ বড়তে থাকলে শাপলা ফুলের পাপড়ি ছোট হয়ে যায়।
শাপলাল বিল ঘুরে দেখতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে নৌকার সু-ব্যবস্থা। পর্যটকদের জন্য বিলটির তীর ঘেষেই রয়েছে খাওয়া এবং সাময়িকভাবে থাকার ব্যবস্থাও। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয়দের দাবি গত বছরের তুলনায় এবার শাপলার ফলন কমে গেছে। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই স্থানীয় স্বল্প আয়ের মানুষেরা অভাবী সংসারে এক সময় সাতলার বিলের শাপলাতেই জীবিকা নির্বাহ করার কথা শোনা যায়। তাছাড়া সাদা ফুলের শাপলা সবজি এবং লাল শাপলা ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ বলেও জানা গেছে।
উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সাতলা বর্তমানে একটি পর্যটনমুখী এলাকা হলেও এটি একটি বিলের নাম। বর্ষাকালে এটি সম্পূর্ণ ডুবে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত প্রথম সাতলায় বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করেন। তারপর বিল থেকে বিশাল এলাকা উত্থিত হয়ে বর্তমানে মনোরম এলাকায় পরিণত হয়েছে সাতলা গ্রাম।
বর্ষাকাল থেকে শরৎকালের শেষ ভাগ পর্যন্ত বিল এলাকায় মাইলের পর মাইল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে নয়নাভিরাম রক্ত শাপলা বা লাল শাপলা। শুধু উপজেলার সাতলা গ্রামই নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বারপাইকা, নাঘিরপাড়, কড়াইবাড়ি বিল কদমবাড়ি, চেদ্দমেঘা বিল, কুড়ালিয়া, রামশীল, শুয়াগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার জলাশয়ে লাশ শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে শাপলার জন্ম হলেও শিশির ভেজা রোদমাখা সকালে জলাশয়ে চোখ পড়লেই রং-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের।
এদিকে, স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য সামগ্রী হিসেবে তা বিক্রির জন্য স্বরুপকাঠির ভাসমান বাজার আটঘর, কুড়িয়ানা, ইন্দেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় নৌকায় করে নিয়ে যায়। সকাল না হতেই তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মুহুর্তেই।
বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত শাপলা তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলো হলো সাদা, বেগুনী ও লাল রংয়ের। এর মধ্যে সাদা ফুলের শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল শাপলা ঔষধী কাজে ব্যহৃত হয়। তাছাড়া শাপলা খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম।
যদিও বাণিজ্যিকভাবে শাপলার চাষাবাদ না হওয়ায় স্থানীয় কৃষি অফিসে এর কোন পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি সাতলায় অন্তত ৬০-৭০ হেক্টর জমিতে শাপলা জন্মায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘কয়েক বছর থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা সাতলা গ্রামকে লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে সাতলা নামের সাথে শাপলার কোন সম্পর্ক রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর নেই স্থানীয়দের কাছে। এমনকি ঠিক কতো বছর আগে থেকে এভাবে শাপলা জন্মে তারও সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কেউ।
এ প্রসঙ্গে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘ইতিপূর্বে সাতলা বিলকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যটন কর্পোরেশনকে অবগত করা হয়েছে। সাতলার বিল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে আমরা আশাবাদি।