করোনার থাবা
ওবায়দুল হক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২০, ০৮:৫০ এএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২০, ০৯:০১ এএম
মহামারি করোনাভাইরাসের থাবা থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে সবকিছুই। তবু অন্য অনেক কিছুর মতোই সিনেমা হল বন্ধ। কবে খুলবে, তার একটা আভাস মিললেও জনসমাগম কেমন হবে বোঝা যাচ্ছে না।
অনেক শিল্পী কাজ হারিয়েছেন, তারকারাও কাজের জীবনে ফিরতে না পারায় বিমর্ষ। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো সিনেমা হলের পাশে একই রকম খাঁ-খাঁ করছে মাল্টিপ্লেক্সগুলো।
সপ্তাহান্তের ভিড়ে উপচে উঠছে না কাউন্টার। রুপালি পর্দা তার দ্যুতি হারিয়ে ফ্যাকাসে। তারপরও অনেকেই করোনার আঘাত সয়ে সয়ে অনেকটাই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছেন; কিন্তু তাই বলে কি মানুষের সিনেমা দেখায় ভাটা পড়েছে?
মোটেই না। যার যার মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপে বসে থাকা সিনেমা সঙ্গ দিচ্ছে সবাইকে। এটা বোঝা যায়, মানুষের ফেসবুকে সিনেমা ও সিরিজের আলোচনা দেখলে। কারণ আপনি না দেখলে আলোচনা করছেন কীভাবে। এতে বোঝা যায়, বিনোদনের চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে। শুধু পাল্টেছে মাধ্যম। আর এ পথ ধরেই বদলে যেতে চলেছে বিনোদন।
আজ যখন মানুষ পর্দায় কিছু দেখতে পারছে না। তখন বেছে নিচ্ছে বিকল্প মাধ্যম। এখন কিন্তু অন্যরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর এখানে জিততে হলে আপনাকে দিতে হবে ভালো কনটেন্ট। এসবেই লুকিয়ে আছে লকডাউন-পরবর্তী সিনেমা জগতের মূল সূত্র। মানুষ এখন হাতের মুঠোয় কিংবা বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিনেমা-সিরিজ দেখতে শিখেছে। তার কানে ইয়ারফোন। সে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। এই সময়ে মানুষ গ্ল্যামার চায়, তবে তথাকথিত জাঁকজমক চায় না। এখন তার প্রয়োজন একটা ভালো গল্প। এবার মানুষ অভিনয় দেখতে চায়। নীরব কান নিয়ে শোনে সংলাপ। মন দিয়ে যাচাই করে গল্প। এখন আর তাকে আকর্ষণ করা তত সহজ নয়।
একদিন সিনেমা হল খুলবে। ফের রুপালি পর্দা ঝিলিক দেবে, হাউসফুল হলে বেজে উঠবে শীর্ষ সংগীত; কিন্তু মানুষের রুচি ততদিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে অন্যকিছুতে। ঘরমুখী মানুষ এখন বাইরে বের হওয়ার জন্য আকুল। আর এই আকুল হওয়া মানুষগুলোকেই নতুন কিছু দিয়ে সিনেমা হলে ফেরাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন তাদের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য সিনেমা। তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে আবেগে উদ্বেলিত করতে পারে- এমন গল্প, সংলাপ, অভিনয়, ক্যামেরার কাজ প্রয়োজন। না হলে এই খরা কাটিয়ে সিনেমাশিল্প আগের শক্ত মাটি ফিরে পাবে না।
যেকোনো অসময়ের পর মানুষ সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায়। কারণ মহামারি থেকে কেউ ছাড় পায় না। আর এখান থেকে কেউ জাদুবলে কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। নিজের সুরক্ষা নিজেকেই করতে হবে। সবাই জানে, এখন সত্যিকারের নায়ক-নায়িকারা বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। অনেক তারকার রঙিন স্বপ্ন এখন অনেকটাই ম্লান। নতুন করে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন না অনেকেই। তারপরও অনেকে করোনার আঘাত সয়ে সয়ে অনেকটাই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছেন। সেই মানিয়ে নেয়া থেকেই নতুন এক পৃথিবী অপেক্ষা করছে চলচ্চিত্রের জন্য।
লকডাউনে ঘরের ভেতরে নতুন দর্শকের আবিষ্কার হয়েছে। সিনেমা হলে না চললেও ঘরে চলেছে। হাতে হাতে নতুন সিনেমার প্রিমিয়ার হয়েছে। দেদার দেখছে। বসে, শুয়ে আরামে দেখছে নতুন দর্শক। এই নতুন দর্শকই আশার আলো দেখাচ্ছে। তাই প্রয়োজন নতুন নতুন আইডিয়া, চ্যালেঞ্জিং সিনেমা।
আমাদের চলচ্চিত্রকাররা কি পারবেন? যদি তারা পারেন, তা হলে একদিন ফের উপচে উঠবে হল। কারণ তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখন সামনে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সুতরাং চলুন, এগিয়ে চলুন। একদিন আবার স্ক্রিপ্ট পড়ে আমাদের প্রিয় তারকাদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠবে। আশা করি, সব অন্ধকার মুছে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র শিল্প। দর্শকের কোলাহলে মুখরিত হবে সিনেমা হল প্রাঙ্গণ।