অতিরিক্ত ওজনে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি-জটিলতা বেশি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২০, ১০:০১ এএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২০, ১০:১৩ এএম

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেশিরভাগ সময়টাই কাটছে বাড়িতে, বেড়েছে ওজন। ওজন একেবারে নিক্তির মাপে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। 

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন যা হওয়ার কথা, তার চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল  থাকে, অসুখ-বিসুখ কম হয় ও ফিটনেসও কিছু কম থাকে না। কিন্তু জীবনযাত্রাও জড়িয়ে রয়েছে এর সাথে। বেশি ওজন যেকোনো রোগের মতোই করোনার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শুধু করোনার ঝুঁকি নয়, আক্রান্ত হলে জটিলতার আশঙ্কাও বাড়বে এ ক্ষেত্রে।

কেউ যদি সঠিক খাবার খেয়ে ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করে ওজন একদম মাপে মাপে নিয়ে আসতে পারেন, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু কেউ যদি তা না পারেন, তারও টেনশন করার কিছু নেই, সুস্বাস্থ্যের দিক থেকে অন্তত। তবে বাড়তি ওজনের সাথে যদি কিছু অসুখ-বিসুখ থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার-কোলেস্টেরল, হৃদরোগ- তবে তা চিন্তার ব্যাপার। তখন ওই অতিরিক্ত ওজনটুকু কমিয়ে না ফেললে বিপদ বাড়ে। 

বাড়তি ওজন, অসুখ ও বিপদ

ওজন বৃদ্ধির একটি সূচক আছে, যাকে বলে বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই। ওজন কেজিতে মেপে তাকে মিটারে মাপা উচ্চতার বর্গ দিয়ে ভাগ করলেই পাওয়া যায় বিএমআই। বিজ্ঞানীরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, বিএমআই ১৮.৫-২৫’এর মধ্যে আসা মানে ওজন আছে সঠিক মাপে। ২৫-৩০’এর মধ্যে এলে মানুষটি সামান্য মোটা। কিন্তু এটুকুতে সচরাচর কোনো ক্ষতি হয় না। বিএমআই ৩০-৩৫ মানে মোটা। এতেও এমনিতে খুব একটা সমস্যা নেই। কিন্তু ওবেসিটির সাথে সম্পর্কিত অসুখ-বিসুখ- যেমন ডায়াবিটিস বা ডায়াবিটিসের আগের পর্যায়, হাই প্রেশার-কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, ধূমপানের অভ্যাস, ফুসফুসের কোনো অসুখ ইত্যাদি থাকলে সাবধান হওয়া দরকার।

বিএমআই ৩৫-৪০ মানে খুব মোটা বা ২ ডিগ্রি ওবেস। এর সাথে কোনো রোগ থাক বা না থাক, ওজন না কমালে চলবে না। আর ৪০-এর উপর উঠে গেলে তো কথাই নেই। তাকে বলে মরবিড ওবেসিটি। অর্থাৎ এই ওজনই মানুষটির মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএমআই ৩০-৩৫ হওয়ার সাথে যদি মেটাবলিক সিনড্রোম থাকে, যা ডায়াবেটিসের আগের পর্যায়, কি ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার-কোলেস্টেরলের মধ্যে এক বা একাধিক রোগ থাকে, শরীরে প্রদাহের প্রবণতা বেড়ে যায় খুব, দুর্বল হয় রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা। বাড়ে সংক্রমণের আশঙ্কা ও জটিলতা।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলেছে, যাদের ওজন খুব বেশি থাকে, বিএমআই প্রায় ৪০-এর কাছাকাছি বা বেশি, তাদের বেশির ভাগেরই মেটাবলিক সিনড্রোম থাকে বলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বেশি, বেশি জটিলতার আশঙ্কাও। 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেন, ওজন খুব বেশি হলে ফুসফুসে উপরেও চাপ পড়ে। আর কভিডে যেহেতু ফুসফুসই আক্রান্ত হয় বেশি, রোগের জটিলতা বেড়ে যেতে পারে হঠাৎই।

তবে আশার কথা এই যে, সঠিক পদ্ধতিতে ডায়েট ও ব্যায়াম করে অতিরিক্ত ওজনের ৫ শতাংশও যদি কমিয়ে ফেলা যায়, তাহলে প্রেশার, সুগার ও কোলেস্টেরল সবই কমতে শুরু করে।

পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র বলেন, ওজন কমার ৭০ শতাংশ চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে সঠিক ডায়েটের মাঝেই। কাজেই কেউ যদি সিম্পল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন- চিনি, মিষ্টি, ময়দা, ফলের রস, নরম পানীয় ইত্যাদি খাওয়া কমিয়ে বা বন্ধ করে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন- লাল চালের ভাত, আটার রুটি, পর্যাপ্ত শাক-সবজি, ডাল, ছোলা, পরিমিত মাছ, ডিম, মাংস, ফল ও দুধ খেতে শুরু করেন, বাজারের তেল-মশলাদার খাবার ও ভাজাভুজি ছেড়ে দিতে পারেন, কম সময়ের মধ্যেই ওজন কমে যায়।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় বলেন, ওজন কমাতে ডায়েটিংয়ের পাশাপাশি ব্যায়াম করতে হবে। একেবারে যারা শুয়ে-বসে থাকেন তারা শুরুতে হালকা হাঁটাহাঁটি ও ঘরের কাজ দিয়ে শুরু করে, আস্তে আস্তে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ব্রিস্ক ওয়াকিং ও স্ট্রেচিং করবেন। পরের ধাপে আরেকটু ভারি ব্যায়াম করতে হবে। তবে সবটাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো। বিশেষ করে যদি বয়স বেশি হয়, হাই প্রেশার-সুগার, হৃদরোগ বা হাঁটু-কোমরে ব্যথা থাকে। 

তবে কম বয়স ও কোনো অসুখ-বিসুখ না থাকলেও ভারি ব্যায়াম করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি বলেও জানান তিনি। -আনন্দবাজার পত্রিকা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh