বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বর্ষপূর্তিতে কাশ্মীরজুড়ে কারফিউ জারি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২০, ১১:২০ এএম

কাশ্মীরের রাজ্য ও বিশেষ স্বায়ত্তশাসন মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার বর্ষপূর্তি ঘিরে বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজ্যটিতে দুইদিনের কারফিউ জারি করেছে ভারত।

গতকাল সোমবার (৩ আগস্ট) তড়িঘড়ি করে কারফিউ জারি করা হয়। আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধের সময়সীমা ৫ আগস্ট থেকে বাড়িয়ে ৮ আগস্ট করা হয়েছে। 

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওইদিন উপত্যকা থেকে ৩৭০ ধারা  বাতিল করে সেটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শ্রীনগরের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তাদের কাছে এই খবর এসেছে যে কাশ্মীরে কিছু ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাকিস্তানের মদতপুষ্ট কিছু গোষ্ঠী’ ৫ আগস্ট দিনটিকে কালো দিবস হিসাবে পালন করার পরিকল্পনা করেছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করার জন্য সহিংস বিক্ষোভ হতে পারে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য হাতে এসেছে। ফলে এই পরিস্থিতিকে সামাল দিতে প্রশাসনের তরফ থেকে কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট শহরে হিংসাত্মক বিক্ষোভের সুনির্দিষ্ট খবর পাওয়া গিয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তিহানীর আশঙ্কা আছে। এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য হিংসা আটকানো এবং জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় অবিলম্বে জেলায় কারফিউ জারি করা হচ্ছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের চলাচলের উপরে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের জমায়েত।

কভিড-১৯ মহামারিজনিত পরিস্থিতিতে যারা আবশ্যকীয় পরিষেবার সাথে যুক্ত তেমন ব্যক্তিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। 

এদিকে সোমবারও উপত্যকা জুড়ে কড়া বিধিনিষেধ জারি ছিল। কার্যত অঘোষিত কারফিউয়ের রূপ নিয়েছিল উপত্যকা। সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাজার ছিল বন্ধ। পথে নামেনি যানবাহন। জনগণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রাস্তায় রাস্তায় বিপুল সংখ্যক জওয়ানকে টহল দিতে দেখা গিয়েছে। উপযুক্ত জরুরি কারণ ছাড়া লোকজনকে রাস্তায় বের হতে নিষেধ করা হয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

গত বছরের ৫ অগাস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। পাশাপাশি রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বিভক্ত করা হয়। সেই সময় অশান্তি এড়াতে উপত্যকার কয়েকশো রাজনৈতিক নেতাকে আটক অথবা গ্রেফতার করা হয়। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিসহ অনেক নেতা এখনো গৃহবন্দি অবস্থাতেই রয়েছেন।

এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে বলেছেন, ২০১৯ সালে শ্রীনগরের পরিস্থিতির তুলনায় এবার আরো ২৪ ঘণ্টা আগেই সব প্রস্তুতি সারা হয়েছে এবং আমার ধারণা, উপত্যকা জুড়ে সব জায়গাতেই একই কাজ করা হচ্ছে, সব জায়গাতেই কঠোর কারফিউতে জারি করা হয়েছে।

ওমর আবদুল্লাহকে প্রায় আট মাস আটক করে রাখার পরে গত ১১ মার্চ মুক্তি দেয়া হয়।  গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে আটক অবস্থায় রয়েছেন মেহবুবা মুফতি। তাকে জননিরাপত্তা আইনে আরো তিনমাসের জন্য আটক করে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান মুফতি এক বছরেরও বেশি সময় আটক থাকার পরেও তাকে কবে মুক্তি দেয়া হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেনি কেন্দ্র।

এছাড়া জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপের বিরোধিতা করায় আটক করা হয় পিপলস কনফারেন্সের প্রধান সাজাদ লোনকেও। পরে তাকে গত ৩১ জুলাই আটক অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়া হয়। -এনডিটিভি ও এই সময়

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh