মিজান রেহমান
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২০, ০৪:৪৪ পিএম
যেসব ব্যক্তিবর্গ দৃঢ় মনোবল নিয়ে "করোনা" মহামারীকে জয় করে চলেছে তাদের মধ্যে "মাওলানা আমজাদ হোসেন" একজন। যিনি একাধারে একজন ইসলামিক গবেষক, কূটনীতিক এবং চট্টগ্রাম হালিশহরস্থ হোসাইনি মসজিদের খতিব।
সত্যিকার অর্থে যখন আমরা শুনি, কোনো মানুষ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছে তখন তার পরিবারে খুশির সীমা থাকে না। আর যদি এমন খবর শুনি করোনাকে জয় করে চলেছে প্রতিনিয়ত এ দেশের জনগণ, তখন এটি হয় দেশের জন্য শুভকর।
কেননা এমন ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে, আগামীর সমাজ হতে পারে 'করোনামুক্ত'। কাজেই দৃঢ মনোবলের সংযোগে করোনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এমনটি মনে করেন, সম্প্রতি করোনা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া মাওলানা আমজাদ হোসেন।
মাওলানা সাহেব যেহেতু খতিব তাই পেশাগত কারণে প্রতিনিয়ত তাকে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। হয়ত বা কখনো মসজিদে নামাযের কারণে, না হয় ওষুধের প্রয়োজনে।
সর্বশেষ তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন এই মহামারীর দিনে। কিছু অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার নিমিত্তে। কিন্তু কে জানতো ,তাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে?
ঘর থেকে বের হওয়ার পর থেকে তার জ্বর ১০০-১০৩ ডিগ্রি উঠা নামা শুরু করতে লাগলো। তারপর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তিনি করোনায় আক্রান্তের মধ্যে একজন হতে চলেছে। তবে তিনি একটু দ্বিধায় ছিলেন, কারণ জ্বর ছাড়া করোনা শনাক্ত হয় এমন অন্য আর কোন লক্ষণ তার মধ্যে ছিলো না।পরের দিন পরীক্ষা করার পর তিনি আসল সত্য উপলদ্ধি করলেন। তিনি আক্রান্ত।
শুরু হলো জীবনের আরেক সংগ্রাম। যে সংগ্রামে তিনি একা, তাকে সাহায্য করার মত কেউ থাকলেও এখন করতে পারবে না (সরাসরি)। কারণ জীবনের তাগিদ। তাই অনলাইনে ডা. আমির হোসেনের (করোনা বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল) নির্দেশনায় শুরু হলো সংগ্রামী জীবনে প্রথম পাঠ।
চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি নিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় উপনীত হন। সেই সাথে চিকিৎসকের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় একপর্যায়ে তিনি পূর্ণ সুস্থতা অনুভব করতে লাগলেন।
তিনি বলেন, নিয়মিতভাবে ডাক্তারের নির্দেশনা ও নিজেকে কড়া নিয়মের মধ্যে রেখেছিলাম, কারণ জীবন থাকলে আশা থাকবে বলে। সাথে দৃঢ মনোবল ছিলো।
করোনা দিনগুলোর অসুস্থতার অভিজ্ঞতাকে স্মরণাতীত করে তিনি আরো বলেন, 'আমাদের মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ আমাদের জীবন দেওয়া ও নেওয়ার একমাত্র মালিক। এই বিষয়টা মনে রেখে মনোবলকে শক্ত করতে হবে, না হয় মন্দ চিন্তায় মনোবল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তখন, জীবনের আশা একেবারে চলে যাবে। সকল অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে বিশেষ করে, নামায, দোয়া ও জিকিরে। যতোটুকু ইবাদত করা যায়, তা করা প্রয়োজন।
তবে মাওলানা আমজাদ হোসেন মনে করেন- এ সময় দৃঢ মনোবলের পর যে বিষয়টি মানুষকে বড় আকারে শক্তি যোগাবে তা হলো,পরিবারের মমতা। যেটি তিনি পেয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত ব্যাক্তিকে ফেলে বাকিরা হয়ে যায় গায়েব।কখনো এমনটা হওয়া কাম্য নয়। সেই সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যাবতীয় নিয়ম-নীতি মেনে চলা এবং নিকটস্থ ডাক্তারের নির্দেশনা সবসময় আমলে নিতে হবে।
তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে যেনো ভাইরাসটি শরীরের ভিতর জমাট বাঁধতে না পারে সে জন্য করোনামুক্ত মাওলানা আমজাদ হোসেন কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ সময় বেশি বেশি গরম পানি পান করতে হবে। বিভিন্ন মসলা দিয়ে- বিশেষ করে এলাচি ও লেবু মিশিয়ে পান করাই উত্তম। দিনে চার-পাঁচ বার। সাথে বেশি করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল খেতে হবে। শরীর সতেজ রাখতে হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। শরীরের তাপমাত্রার প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে,যদি একটু এদিক-সেদিক হয় সাথে সাথে ডাক্তারকে জানাতে হবে।
তিনি বলেন- আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, কারোনায় আক্রান্ত সকল রোগীদের সুযোগ-সুবিধা সমান হয় না। যেহেতু, দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কাজেই কেউ চাইলে ঘরে বসে চিকিৎসা নিতে পারেন। যেটি হতে পারে সময়ের সঠিক সিন্ধান্ত। তারপরেও অনেকের মনে হতে পারে ঘরে বসে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা কম। বস্তুত এমনটি চিন্তা করার কোন কারণ নেই।এক্ষেত্রে করোনা যে ঘরে বসে জয় করা যায় তার উদাহরণ আমি নিজেই।
এদিকে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে মাওলানা আমজাদ হোসেন সকল চিকিৎসদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। সে সাথে তিনি বিশেষভাবে করোনা বিশেষজ্ঞ ডা. আমির হোসেনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
লেখক: মিজান রেহমান, প্রবন্ধকার।