বাংলাদেশ
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৮:২০ এএম
করোনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতি সেবা, শিল্প ও কৃষি, প্রধানত তিনটি খাতে বিভক্ত। দেশের অর্থনীতিতে সেবা খাত ৫০ শতাংশ, শিল্পখাত ৩৫ শতাংশ এবং কৃষি ১৪ শতাংশ অবদান রাখছে। করোনার কবলে বিগত প্রায় তিন মাসে প্রধান দুটি খাত সেবা ও শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) তার সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি হবে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি। লকডাউন ও সাধারণ ছুটিসহ মহামারির প্রভাবে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে।
আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) প্রকাশিত ‘কান্ট্রি ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত পোশাক রফতানি ও রেমিট্যান্স মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বিগত (২০১৯-২০) অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদিও করোনা সংকটের আগে সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।
চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে । জ্বালানি তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যে থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমে যাবে। ধনী দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাবের ফলে পোশাক রফতানি আয়ও কমে যেতে পারে।
নতুন অর্থবছরে (২০২০-২১) প্রায় পৌনে ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেটকে একদিক থেকে সাহসী বলা যায়। যদিও এর সাফল্য নির্ভর করছে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়া এবং অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসার ওপর। বিশ্বের বড় সংস্থাগুলোর ভাষ্য যাই বলুক, তাদের হিসাব-নিকাশ ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে বহুবার।
করোনা-পরর্বতীকালেও যদি আমরা রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স নির্ভরতা কমিয়ে এনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে পারি, প্রায় সোয়া তিন কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি, কাজহীন মানুষের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারি, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে করোনার ফলে উদ্ভূত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।
সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে ব্যয় সংকোচনের দিকে। একসঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে। এ পদক্ষেপগুলো সফল হলে, এ যাত্রায়ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারবে।