আসন্ন বাজেটে সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণের বরাদ্দ চাই

সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ১০:৫৩ পিএম

পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষকদের আজীবন লালিত স্বপ্ন জাতীয়করণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একযোগে পঁচিশ হাজার প্রাইমারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বেসরকারি শিক্ষকগণ বিশ্বাস করেন- বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এতদিনে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যেতো।

বাজেট আসে প্রতিবছর, আর প্রতিটি বাজেট পেশ করার আগে বেসরকারি শিক্ষকগণ আশা করে বসে থাকে- বোধহয় এই বাজেটেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয়করণের ঘোষণা দিতে পারেন। হয়তো বাজেটে জাতীয়করণের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেট পেশ হবার পর সবচেয়ে বেশী হতাশ হয় বেসরকারি শিক্ষকগণ। কারণ বাজেটে তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। আইএলওয়ের ঘোষণা অনুযায়ী- জিডিপির ছয় শতাংশ বরাদ্দ থাকার কথা শিক্ষা খাতে। অথচ এই বিষয়টি সব বাজেটেই উপেক্ষিত থাকে।

গুণীজনের কদর না থাকলে পৃথিবীতে গুণীজন জন্ম হয় না কখনও। বেসরকারি শিক্ষকদের এক হাজার টাকা বাড়ি দিয়ে উপহাস করা হয়েছে। পাঁচশত টাকা মেডিকেল ভাতাও এক ধরনের হাস্যকর। পৃথিবীর এমন দেশ আছে শিক্ষকদের প্রশাসন গ্রেপ্তার করতে চাইলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো দেশে শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা দিয়ে থাকেন। আবার কোনো দেশের শিক্ষক আদালতের বিচার প্রার্থী হয়ে গেলে বসার জন্য চেয়ার বরাদ্দ রাখা থাকে আর আমাদের শিক্ষকরা শুধু ছাত্রদের সালাম নিয়ে তুষ্ট থাকতে হয় সারাজীবন।

বেসরকারি শিক্ষকরা আশার আলো দেখছেন। কারণ বিচ্ছিন্নভাবে হলেও কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হয়েছে। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ শিক্ষকরা। তবে বিচ্ছিন্নভাবে জাতীয়করণে এ বৈষম্য বাড়বে। একই যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক শুধু জাতীয়করণ ঘোষণার কারণে বেতন ভাতার দিক হতে যোজন যোজন পার্থক্য। এই বৈষম্য কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না। 

শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে শিক্ষক হলেন জাতি গঠনের মহান কারিগর। জাতি গঠনের এই মহান কারিগরদের যথাযত সন্মান দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যুগে যুগে শিক্ষকগণ স্থাপত্য বিনির্মাণ করে যাচ্ছেন নীরবে। দেশ পরিচালনার যোগ্য নাগরিক তাদের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। সচিব উকিল ডাক্তার মন্ত্রী সবাই কিন্ত শিক্ষকদের হাতে গড়া মানু্ষ। একটি নন্দন কাননের মালি যদি হন একজন শিক্ষক তাহলে তাহলে তিনি নিস্বার্থভাবে সুবাসিত ফুল ফুটিয়ে মালির কাজটি করে যাচ্ছেন। সুন্দর মানুষ তৈরি করে আলোয় আলোয় ভরে দিচ্ছেন গোটা পৃথিবী।

এমপিও সিস্টেম একটি বাজে সিস্টেম এটি বাতিল করে দেয়াটা খুবই যুক্তিযুক্ত। কারণ এই সিস্টেমের আওতায় একজন শিক্ষকের বেতন ভাতার আওতায় আসতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। দেশের এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে সে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবসরে যাবার সময় হয়ে গেছে অথচ তারা এখনও সরকারি এমপিও পাননি। যারা এমপিও পেয়ে দীর্ঘদিন চাকরি করে অবসর ভাতা তুলতে যায় সেখানে তাদের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায়। যেহেতু অবসর ও কল্যাণ ভাতা বাবদ যেহেতু শিক্ষকদের বেতন হতে ১০% কর্তন হচ্ছে সেহেতু শিক্ষক অবসর নেবার পরেই চাহিবা মাত্র অবসর সুবিধা দিয়ে দেয়া উচিৎ।

আমাদের একমাত্র আশা ভরসার স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার মুখ হতে জাতীয়করণ ঘোষণা শুনতে অধির আগ্রহে বসে আছে শিক্ষকরা। আসন্ন বাজেটে এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখে পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণ করবেন।

সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন
সহকারি অধ্যাপক,
বাকলিয়া শহিদ এন এম এম জে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh