সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২০, ১০:২৭ এএম
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ ছাড়া বাংলাদেশে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি। ফলে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয় এবং বাকি ৫৭ শতাংশ অলস পড়ে থাকে। বছরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদার মৌসুমেও প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকে। গত অর্থবছরে অলস বসিয়ে রাখায় বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে সরকারকে। ক্ষতি কমাতে সমন্বয়ের নামে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়লেও বিনা দরপত্রে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে’ নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বন্ধ থাকেনি।
মহাপরিকল্পনা অনুসারে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অব্যাহত থাকলে ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রকৃত চাহিদার চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশে এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা অনেক বেশি। তার ওপর করোনাভাইরাস মহামারি বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় নতুন কেন্দ্রগুলো পুনর্বিবেচনা করা না হলে এই বাড়তি বিদ্যুৎ দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠবে। উপরন্তু এ জন্য সরকারকে যে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে তা কেবল বেসরকারি কোম্পানির মালিকদের পকেটেই চলে যাচ্ছে। শিল্পের চেয়ে ব্যবসাকে গুরুত্ব দেয়ার এই প্রবণতা দেশের অর্থনীতিতে কিছুই যোগ করছে না। তাই এখন দরকার গোটা বিদ্যুৎ খাতের পুনঃমূল্যায়ন। বাস্তবে বাংলাদেশের কতটুকু বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে, সেটি নির্ধারণ করেই নতুন কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি বিদ্যুৎ উদ্বেগ তৈরি করায় বড় কয়লাভিত্তিক বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে। সম্প্রতি চীনা বিনিয়োগে মিসরে ছয় হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎপ্রকল্প অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে দেশটি; কিন্তু আমাদের দেশে তুলনামূলক স্বল্পমূল্যের প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সরে এসে আমদানিকৃত কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছেই, যা দীর্ঘমেয়াদি বাড়তি বিদ্যুৎ সমস্যায় আটকে দিচ্ছে বাংলাদেশকে।
বলা বাহুল্য, আমাদের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা যথাযথ নয়। তাই এখন প্রয়োজন নতুন নীতিমালা। তা না হলে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান গোটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।