খান রুবেল, বরিশাল
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২০, ০২:০১ পিএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২০, ০২:০৩ পিএম
এখন চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছে গাছে ঝুলছে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমী ফল। কিছুদিন পরেই ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে এসব সুস্বাদু ফলের সমারোহ ঘটবে বাজারে। কিন্তু তার আগেই অপরিপক্ক আমে সয়লাব নগরীর বাজার। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কারবাইড দিয়ে পাকানো এসব অপরিপক্ক আম বাজারজাত শুরু করেছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম বিক্রি করছেন খুচরা বাজারে। যা খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতারা।
তবে অভিযোগ উঠেছে, বাজার রোডের ফলের আড়তগুলোতে প্রকাশ্যে অপরিপক্ক আম প্রদর্শন করে তা বিক্রি করলেও সেদিকে প্রশাসনের তেমন সুদৃষ্টি নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই অপরিপক্ক আম বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে এ বিষয়ে তাদের বাজার তদারকি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর কখন কোন আম বাজারে আমদানি এবং বিক্রি করা যাবে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা ও সময় বেধে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি মাসে অর্থাৎ ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া জাতের আম, ১৫ জুন থেকে আমরূপালী ও ফজলি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনী ও পারিজাতের আম বাজারজাত করা যাবে।
নির্দেশনায় এমনটি থাকলেও বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। নির্ধারিত সময়ের আগেই ট্রাক ভর্তি অপরিপক্ক আম নিয়ে আসা হচ্ছে বরিশাল নগরীর আমের আড়তগুলোতে। এমনকি আগেভাগেই তা পাকানোর জন্য দেয়া হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক।
নগরীর পোর্ট রোডের কয়েকটি ফলের আড়তে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে আসা হচ্ছে অপরিপক্ক আম। এর মধ্যে মেসার্স রাকিব স্টোর, মক্কা বাণিজ্যালয়, তপন সাহা ফল ভান্ডার অন্যতম। এরা গত প্রায় এক মাস আগে থেকেই অতি লাভের আশায় রাসায়নিক বা কারবাইড দিয়ে পাকানো অপরিপক্ক আম প্রায় এক মাস আগে থেকেই বিক্রি শুরু করেছে।
জানা গেছে, গত ১১ মে সবুজ মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছে ৫১ হাজার ১৩৮ টাকার গুটি আম বিক্রি করে নগরীর হাটখোলা নিউ সদর ঘাট রোডের মেসার্স তপন সাহা ফল ভান্ডার। একই আড়ত থেকে ১৩ মে ৫ হাজার ৫৭০ টাকার আম বিক্রি করা হয় আলকাস নামের এক ব্যক্তির কাছে।
এছাড়া মঙ্গলবার (২ জুন) সকালে হাটখোলার আমের আড়তগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাকে করে রাজশাহী থেকে আনা হয়েছে অপরিপক্ক আম। যা ট্রাক থেকে নামিয়ে গুদামজাত করছেন মেসার্স রাকিব স্টোর, মক্কা বাণিজ্যালয় ও তপন সাহা ফল ভান্ডারসহ অন্যান্য আড়তের ফল ব্যবসায়ীরা। এমনকি বিক্রির জন্য তা প্রকাশ্যে প্রদর্শনও করা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে তদারকি করতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।
গেলো রমজানের শুরুতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ দস্তগীরের নেতৃত্বাধীন টিম অপরিপক্ক আম বাজারজাত বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু ওই অভিযানে সফলতা আসেনি। ফলের আড়তে তখন অপরিপক্ক আম খুঁজে না পেয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে চলে আসেন মোবাইল কোর্ট টিম। কিন্তু এর পরে আর এ বিষয়ে তদারকি দেখা যায়নি জেলা প্রশাসন কিংবা জাতীয় ভোক্তা সংরণ অধিদফতরের।
অসময়ে অপরিপক্ক আম বাজারজাতের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা দাবি করেন, সম্প্রতি বন্যায় কাঁচা আমের ব্যাপক
ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে গাছ থেকে ঝরে পড়া আম আমাদের না জানিয়েই ট্রাক ভরে রাজশাহী থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে। দু-একদিন এভাবে রাখা হবে। কাঁচা আম বিক্রি করতে না পারলে তা নদীতে ফেলে দেয়া হবে। তবে কাঁচা আমে রাসায়নিক মেশানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, পরিমাণ মতো রাসায়নিক খাওয়া যেতে পারে। তবে সেটা মাত্রাতিরিক্ত খেলে শরীরের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে পাকানো আমে যে ভিটামিন পাওয়া যায় সেটা রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আমে থাকে না।
বাজারে অপরিপক্ক আম বিক্রির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ সোয়াইব মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমে রাসায়নিক মেশানো হয়েছে কিনা সেটা পরীাক্ষা করে দেখতে হয়। কিন্তু পরিবারে রাসায়নিক পরীক্ষার ল্যাব নেই। তাই এ বিষয়ে চাইলেও কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।
তার পরেও খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে তদারকি শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
সার্বিক বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কিছু অপরিপক্ক আম কয়েকজন ব্যবসায়ী নিয়ে এসেছেন বলে শুনেছি। তাদের আমরা ইতিমধ্যেই নির্দেশনা প্রদান করেছি আমগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য। পুনরায় এ ধরনের আম বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।