মাহমুদ সালেহীন খান
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২০, ০৯:১৪ এএম
‘রোজা হলো ঢাল স্বরূপ।’ (বুখারি : ১৮৯৪)। ঢাল যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধাকে শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা করে, রোজাও তেমনি বান্দাকে শয়তানের প্রবঞ্চনা ও কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে।
রোজা সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে রক্ষাকারী ঢাল। রোজা কবর ও জাহান্নামের আগুন থেকেও রক্ষাকারী ঢাল।
তবে রোজা দুনিয়া ও আখেরাতের ঢাল তখনই হবে যখন তাকে অক্ষুন্ন রাখা হবে। যদি একে বিনষ্ট করে ফেলা হয়, তবে এর মাধ্যমে আত্মরক্ষার সুফল পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রোজা কীভাবে নষ্ট হয়ে যায়? উত্তরে তিনি বললেন, ‘মিথ্যা বললে কিংবা গীবত করলে।’ (তবরানি : ৭৮১০)।
রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুয়ায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’(বুখারি: ১৯০৩)।
অর্থাৎ হাদিস মতে, রোজা পালনকারী এসব গর্হিত কাজে লিপ্ত হলে সে কিছুই পাবে না রোজা থেকে। আর যদি বান্দা এ সব থেকে বিরত থাকতে পারে তাহলে তাকওয়ার স্তরে উন্নীত হবে। ফেরেশতা চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে।
ভাঙা ঢালের সাহায্যে যেমন দুশমনের আঘাত প্রতিহত করা যায় না, তেমনি রোজার মাহাত্ম্য ও আদব নষ্ট করে ফেললে এর দ্বারা মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভ করা যায় না।
রোজা অবস্থায় গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, জুয়া, আত্মসাৎ, ঝগড়া-বিবাদ, হারাম খাদ্য ও নামাজ না পড়া ইত্যাদি মন্দকাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘শুধু পানাহার পরিত্যাগের নাম রোজা নয়; বরং প্রকৃত রোজা হচ্ছে, রোজা রেখে অনর্থক কথা ও গুনাহ পরিহার করা। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় কিংবা ঝগড়া করতে চায়, তখন সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ (ইবনে হিব্বান : ৩৪৭০)।
অতএব রোজাদারের উচিত সকল অন্যায়-অবৈধ কাজ হতে বিরত থাকা এবং মুখ, কান, চোখ, হাত ও পা সব অঙ্গকে গুনাহ থেকে পবিত্র রাখা।
যারা সময়কে যথাযথ কাজে লাগায়, সফলতা তাদেরেই পদচুম্বন করে। যুগ যুগ ধরে এ নিয়মেই চলে আসছে। দেখতে দেখতে আমাদের থেকে রমজানের শেষের দিকে চলে আসছি। একজন মুমিনের জন্য এ মাসটি কত গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আসুন নিজেরাই একটু হিসেব করি পুরো রমজানে আমাদের আমলনামার খাতা কতটুকু পূর্ণ হলো।
নিজের আত্মসমালোচনা নিজে করা আল্লাহ বেশি পছন্দ করেন। আত্মসমালোচনাকারীদের প্রশংসা করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যাদের অন্তরে ভয় রয়েছে, তাদের ওপর শয়তান আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বোধশক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে।’ (সুরা আরাফ : ২০১)।
অন্যত্রে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য (আখিরাতের জন্য) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয় তারা ফাসিক।’ (সুরা হাশর : ৫৯/১৮)
রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল ও প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, ‘আমি ওই দিনের চেয়ে বেশি অনুশোচনা অন্য কোনো ব্যাপারে করিনি যে দিনটি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে কিন্তু আমার আমল বৃদ্ধি পায়নি।’
আমার প্রতিটি রাত-দিন জীবনের মূলধন, এর লাভ হচ্ছে জান্নাত আর লোকসান হচ্ছে জাহান্নাম। প্রতিটি বছর একটি গাছের ন্যায়, মাস ও দিনগুলো তার শাখা, আর তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস ফলের ন্যায়। সুতরাং যার প্রতি মুহূর্ত আল্লাহর আনুগত্যে কাটে তবে তার ফল সুমিষ্ট ও বরকতময়, আর যদি তার সময় অবাধ্যতায় কাটে তবে তার ফল মন্দ, স্বাদ তিক্ত।