সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:৩৫ পিএম
গোটা বিশ্বের মানুষ আজ করোনাভাইরাস নিয়ে আতংকিত। চীন দেশে প্রথমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও পৃথিবীর অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। যার কারনে বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশ লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরে ২১৯ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৩১ জন। এটাই এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত।
এরইমধ্যে দেশের বিভাগ থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা এবং প্রয়োজনভেদে গ্রামও লকডাউন করা হয়েছে। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে ১০ এপ্রিল (শুক্রবার) প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো মন্ত্রণালয়। তবে পরদিন শনিবার (১১ এপ্রিল) সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে আরো কঠোরতা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এই নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রণোদনা থেকে শুরু করে গরিবদের জন্য ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করছে।
কিন্তু সেখানে হীতে বিপরীত হয়েছে। ''চাল চোর'' যেনো এখন টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, দেশ লকডাউন থাকায় ভিন্ন চিত্র রিক্সাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা নির্মাণ শ্রমিক, কুলি, দিনমজুর সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।
কাজ করতে না পেরে খাবার খাওয়াই এখন দায় হয়ে পড়ছে। মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নশ্রেণির মানুষরা এরই মধ্যে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। কিভাবে জোগাড় করবে মাস শেষে বাড়িওয়ালার ভাড়ার টাকা? মিল কারখানা পোশাক শ্রমিক হিসেবে যারা চাকরি করেন তারা মাস শেষে মাইনে হাতে না আসলে লকডাউনে কিভাবে তাদের জীবিকা নির্বাহ করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?
আমি মনে করি, এসব দায়িত্বগুলো স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মালিকের উপর ছেড়ে দিতে হবে। দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, নির্মাণ শ্রমিক যারা আছেন তাদের দায়িত্ব সরাসরি সরকারকে নিতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে এসব খেটে খাওয়া মানুষের তালিকা তৈরি করে দৈনিক আহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
কারণ, এই লকডাউনে মানুষের ঘরে ঘরে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে নিজ খরচে পদ্মাসেতু নির্মাণ হয়, যে দেশে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন টাকার মালিক রয়েছেন সেদেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে এইটা কিভাবে সম্ভব? তাই সবাইকে নিয়ে এই মহামারি মোকাবেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কথায় আছে দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ- এই বিপদের মুহূর্তে সবারই অংশগ্রহণ খুবই বাধ্যতামূলক বলে আমি মনে করি।
লেখক: সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন,
সহকারি অধ্যাপক।
বাকলিয়া শহিদ এনএমএমজে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম।