জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের খুন করেন বিটিসিএল কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০৬:১৯ পিএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০৬:২০ পিএম

রাজধানীর দক্ষিণখানে স্ত্রী ও দুই সন্তান হত্যা মামলার আসামি বিটিসিএল কর্মকর্তা রাকিব উদ্দিন আহম্মেদ লিটনকে (৪৬) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেফতারের পর তিনি এই হত্যাকাণ্ডের কথা ‘স্বীকার করেছেন’ বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. মশিউর রহমান।

রাকিবের বরাতে তিনি জানান, অফিসের সহকর্মীসহ অন্যান্যের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় সোয়া কোটি টাকা সুদে ধার নিয়েছিলেন টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক রাকিব। কিন্তু অনলাইনে জুয়া খেলে তিনি সব টাকা নষ্ট করেন।

পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে মেজাজ বিগড়ে থাকতো তার। বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন প্রতিনিয়ত। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি কিছু দিন আত্মগোপনেও ছিলেন। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে খুন করেন রকিব।

এরপর নিজেও রেললাইনে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে আর পুলিশের কাছে ধরা দেননি, ফেরেননি ঘরেও। তিনটি খুনের ঘটনার পর থেকে পাগলের বেশ ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।

ঘটনার পর থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে রকিবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

দক্ষিণখান থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়ন্দা উত্তর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার মো. মনোয়ার হোসেনের বাড়ির ৪র্থ তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ আসলে দক্ষিণখান থানা পুলিশে খবর দেয়া হয়।

পুলিশ দরজা খুলে ভেতরে অর্ধগলিত অবস্থায় একই পরিবারের স্ত্রী, শিশুপুত্র ও শিশুকন্যার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানা পুলিশসহ উত্তরা অপরাধ বিভাগের বিভিন্ন ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তা, পিবিআই, এসবি, র‌্যাব, সিআইডির ক্রাইমসিন বিভাগ ও ডিবি উত্তরের বিমানবন্দর জোনাল টিম চাঞ্চল্যকর তিন খুনের মামলাটির তদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল থেকে হত্যা সম্পর্কে একটি নোট পায় পুলিশ, যা নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। বিমানবন্দর জোনাল টিম উদ্ধার করা নোটের লেখা পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, পলাতক রকিব উদ্দিন লিটন তাদের হত্যা করেছেন। তখন থেকেই তাকে ধরার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

অবশেষে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

হত্যার কারণ সম্পর্কে রাকিব জানান, স্ত্রী মুন্নী (৩৭), ছেলে ফারহান (১২) ও মেয়ে লাইবাদের (৩) নিয়ে ওই বাড়ির ৪র্থ তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। বিটিসিএলের কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে রকিব উত্তরায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে থাকতেই অফিসের কর্মীসহ অন্যান্যের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সুদের ওপর বিভিন্ন সময়ে ধার নেন, যেগুলো অনলাইনে জুয়া খেলে নষ্ট করেন। এদিকে পাওনাদাররা তাদের পাওনা টাকা আদায়ে চাপ দিতে থাকেন। এ কারণে বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন রকিব।

গত ডিসেম্বরে কিছু দিন আত্মগোপনে থাকায় তার সন্ধান চেয়ে পরিবার দক্ষিণখান থানায় জিডিও করে। কিন্তু কিছুদিন পরে তিনি বাসায় ফেরেন। পাওনাদারদের বিভিন্ন চাপের কারণে রকিবের সঙ্গে স্ত্রীর ঝগড়া হয়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে নাস্তা করেন তিনি। নাস্তা শেষে স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করেন। গল্প শেষে দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় স্ত্রী মুন্নী ঘুমিয়ে পড়েন। ছেলে ফারহান পাশের রুমে ঘুমিয়ে ছিল এবং মেয়ে লাইবা তার পাশের রুমে টিভি দেখছিল।

সে সময়ে হঠাৎ ভয়াবহ চিন্তা আসে রকিবের মাথায়। তিনি ভাবেন, এই দুনিয়ায় পরিবারসহ বেঁচে থেকে লাভ কী? বরং তাদের সবাইকে মেরে নিজে আত্মহত্যা করলে স্ত্রী-সন্তানসহ নিজে পাওনাদার ও অন্যান্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। তখনই তিনি তার বাসায় থাকা হাতুড়ি দিয়ে প্রথমে তার স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন এবং গলা টিপে মেরে ফেলেন। এরপর তিনি তার ছেলে ও মেয়ের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস আটকিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh