বাগেরহাটে এক ইউনিয়নে অঘোষিত লকডাউন

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০৫:৩৩ পিএম

করোনা প্রতিরোধে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নে প্রবেশ ও ইউনিয়নের বাইরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য ভ্যাকোটমারি-বাবুর বাড়ি, বেলাই ব্রিজের দুই পাশ, গোনাই ব্রিজ বাজার মন্দিরের পাশে, ঝলমলিয়া রোডসহ ১০টি পয়েন্টে বাস দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে এলাকাবাসী।

এসব ব্যারিকেডের পাশে হাত ধোয়ার জন্য পানি ও সাবান রাখা হয়েছে। ইউনিয়নের সকল বাজার, হাট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণু নাশক পানি স্প্রে করেছে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। বর্তমানে বাড়ি বাড়ি জীবাণু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে।

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য চকিদার ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিজ ইউনিয়নকে করোনা মুক্ত রাখতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন গোলদার। প্রবেশ ও বাহির হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার ফলে খেটে খাওয়া মানুষদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে বাড়িতে। করোনা প্রতিরোধে এমন উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী।

ইউনিয়নের বিচিত্র বীর্য পাড় গ্রামের স্থানীয়রা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার বার বার বলছে ঘরে থাকতে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হতে। কিন্তু কিছু মানুষ এসব কথা মানছে না।

অন্যান্য এলাকা থেকেও মানুষ এসে আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে আড্ডা দিতো। চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের লোকেরা নিষেধ করা সত্ত্বেও শুনত না। তাই চেয়ারম্যান এলাকার প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন।

এতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা রাখার অনুরোধ জানান তারা।

জয়নগর পিপুল বুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত ঢালি বলেন, চেয়ারম্যান তপন গোলদার ও ইউনিয়নের যুবকরা মিলে করোনা প্রতিরোধে যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা খুবই প্রশংসনীয়।

তারা এলাকার সকল মানুষকে ঘরে থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে। কোন মানুষের ঘরে চাল না থাকলে, তার বাড়িতে চাল দিয়ে আসছে। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণু নাশক ছিটিয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির রাখা হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

ইউপি সদস্যরা জানান, প্রধান সড়কে এখন আর মানুষ দাড়াতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের ছোট ছোট রাস্তায় এসে আড্ডা দিচ্ছে। মটর সাইকেল নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে। তাই চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমরা এলাকার প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে প্রবেশ দ্বারে ব্যারিকেড দিয়েছি।

এলাকার মানুষকে সচেতন করছি। করোনা প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছি। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া ও প্রবেশের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মুঠোফোনে যোগাযোগ করবেন। চকিদার বা স্বেচ্ছাসেবকরা এসে খুলে দিয়ে যাবেন।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারাবিশ্ব যখন ভয়ে কাঁপছে। তখন কিছু মানুষ আছে যারা কোনভাবেই সরকারি নির্দেশনা মানছেন না। তাই ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষকে করোনা মুক্ত করতে আমরা ইউনিয়নে প্রবেশ ও বের হওয়ায় বিষয়ে এক ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।

খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবে না ইউনিয়নের মধ্যে। এছাড়া খেটে খাওয়া মানুষের বাড়ি বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পরিষদের চকিদার ও দফাদাররা প্রতিনিয়ত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে গেলে তাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে যে কেউ যাতে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে এবং পরিচ্ছন্নভাবে এলাকায় প্রবেশ করেন। সে জন্য স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান তার উদ্যোগ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেছেন। ওই এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে জীবাণু নাশক স্প্রে করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমিত করাটা ভাল। তবে এ বিষয়ে যদি কারো কোন অভিযোগ থাকে, সে বিষয়টি আমরা সমাধান করব।





সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh