সেলুলয়েডে যুদ্ধজয়ের গল্প

গাজী শাহীন

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০১:০১ পিএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০১:০৪ পিএম

আগুনের পরশমনি চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য।

আগুনের পরশমনি চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এ স্বাধীন সোনার বাংলাদেশের জন্মের রক্তক্ষয়ী এক ইতিহাস, এক মহান অধ্যায়, যা আমাদের ইতিহাসে আজীবন থাকবে শোকে ও সুখে। এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও সংবাদচিত্র।

প্রতি বছর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। নতুন নতুন নির্মাতারা নতুনভাবে দেখছেন, ভাবছেন নতুন করে- ফলে উঠে আসছে তাদের সেলুলয়েডে নতুন সব গল্প। 

১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম চারটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয় কলকাতায়। স্টপ জেনোসাইড, এ স্টেট ইজ বর্ন, লিবারেশন ফাইটার্স, ইনোসেন্ট মিলিয়নস। এই চারটি প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছিল- পাকিস্তানিদের গণহত্যা, নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, শরণার্থীদের দেশত্যাগ, আশ্রয়শিবিরের দুঃখ-কষ্ট-মৃত্যু, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অভিযান এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রূপরেখাকেন্দ্রিক।

লেখক ও নির্মাতা শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান এই চারটি প্রামাণ্যচিত্রের নামকরণ করেছিলেন ‘জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র’। চারটি চলচ্চিত্র যে কেউ দেখলে চোখ ভিজে যাবে, দৃশ্যগুলো চোখে আটকে থাকবে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর অসংখ্য চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে আজ অবধি। প্রতি বছরই বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে সেসব চলচ্চিত্র মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। দর্শকরা সেসব চলচ্চিত্র দেখে নিজেদের দেশের সেই ইতিহাসকে জানেন। 

স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি অসংখ্য চলচ্চিত্র থেকে বাছাই করে কয়েকটি দেশ-বিদেশে নন্দিত ও পুরস্কৃত চলচ্চিত্রের পরিচিতি তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য- 

ওরা ১১ জন: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম- ‘ওরা ১১ জন’। ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। এতে অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, খলিলউল্লাহ খান প্রমুখ। সিনেমাটিতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- চলচ্চিত্রে অভিনয় করা প্রধান চরিত্রের ১১ জনের ১০ জনই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এদের মধ্যে অন্যতম হলেনÑ খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু।

সংগ্রাম: সংগ্রাম চলচ্চিত্রটিরও নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। এটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের ডায়েরি থেকে নেওয়া এই চলচ্চিত্রের কাহিনি। সংগ্রামে অভিনয় করেছেন সুচন্দা, খসরু। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি চলচ্চিত্র এটি।

আবার তোরা মানুষ হ: স্বাধীন বাংলাদেশের খ্যাতিমান নির্মাতা প্রয়াত খান আতাউর রহমান (খান আতা) মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’ নামের এই চলচ্চিত্রটি। যুদ্ধ-পরবর্তী সামাজিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে অত্যন্ত নিপুণভাবে এই চলচ্চিত্রে। খান সাহেবের এই চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফারুক, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, চিত্রনায়িকা ববিতা, অভিনেত্রী রোজী আফসারী ও রওশন জামিলসহ আরো অনেকে।

মেঘের অনেক রং: ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মেঘের অনেক রং’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম রঙিন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা হারুনর রশীদ। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রুমা নামের একজন ডাক্তারের স্ত্রী ধর্ষণের পর সন্তানসহ কীভাবে কষ্টের শিকার হয় সে চিত্র উঠে এসেছে। চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাথিন, ওমর এলাহী, রওশন আরা, আদনান প্রমুখ।

ধীরে বহে মেঘনা: ১৯৭৩ সালে নির্মাতা আলমগীর কবিরের এই কাহিনিচিত্রটি মুক্তি পায়। ভারতীয় মেয়ে অনিতার প্রেমিক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়। সে ঢাকায় এসে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে আরও গভীরভাবে মর্মাহত হয়। মানবিকতায় আচ্ছন্ন হয় তার অন্তর। চলচ্চিত্রটিতে বুলবুল আহমেদ, ববিতা, গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, খলিল উল্লাহ খান অভিনয় করেছেন। 

একাত্তরের যীশু: ঢাকা থিয়েটারের কর্ণধার নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্মাণ করেছেন এই চলচ্চিত্রটি। লেখক- সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের কিশোর আখ্যান অবলম্বনে ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রটি নির্মিত। ১৯৯৩ সালে এটি মুক্তি পায়। অভিনয় করেছেন- পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন ফরীদি, জহির উদ্দিন পীয়াল, আবুল খায়ের, আনোয়ার ফারুক, কামাল বায়েজীদ ও শহীদুজ্জামান সেলিম। চলচ্চিত্রটি সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়। 

আগুনের পরশমণি: প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। নিজের লেখা উপন্যাস থেকেই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন তিনি। অভিনয়ে বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি অনন্য ইতিহাস।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh