রাশেদ রাফি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ১১:৩৬ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০, ১২:৪০ পিএম
রাশেদ রাফি
উহান উপাখ্যানের পর দেশ ধর্ম ভুলে ইতালি, ইরান স্পেনসহ প্রায় সমগ্র বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল বইয়ে দিয়ে করোনা এখন গোটা মানবজাতিকে নিয়ে এক অদৃশ্য শক্তির খেলা। (খালি চোখে) এক অদৃশ্য রহস্য ভাইরাস; এক ভৌতিক আতঙ্ক কিংবা পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বলক্ষণসমূহের একটা। তবে পুরনো রেকর্ডকৃত সত্য তথ্য তার কোনটাই বলছেনা।
১৯৬৬ সালে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল লান্সেটে করোনাভাইরাস নিয়ে টাইরেল ও বাইনোয়ি নামক গবেষকদ্বয়ের লেখা একটা প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ওখানে করোনাভাইরাস আবিষ্কারের বছর হিসেবে ১৯৬৫ সালকে দেখানো হয়। ওই সময়ে আবিষ্কৃত ভাইরাসটির নাম ছিল বি-৮১৪। এরপর গবেষণা থেমে থাকেনি।
কান, মেসিন্তোশ ও কেনেথ নামের গবেষকত্রয় দেখান যে ২০০৩ সালের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন জিনের কমপক্ষে আরো পাঁচটি করোনাভাইরাস চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে মৃত্যুহার বৃদ্ধিকারী ভাইরাসও ছিল। ২০১০ সালেও আক্রান্ত ব্যাক্তিদের থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে বিস্তারের সুযোগ না পেয়ে এরা নিজ থেকেই উবে গিয়েছিল।
এক্ষেত্রে বলা যায়- ভাইরাসের বিস্তার ও ধ্বংসলীলা অনেকটা সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড়ের মতো। লোকালয় পর্যন্ত না এসে সমুদ্রের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় কোনো কোনো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। সমস্যা লোকালয়ে এলেই; যত লোকালয়ের সংস্পর্শে যাবে ততই ধ্বংস ঘটবে; ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তেমন। এবারে বিশ্ব মহামারির রুপ নিয়ে করোনাভাইরাস ডিজিজ-২০১৯ (কোভিড-১৯) নামে যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তার জিনদ্বয় আগের ভাইরাসগুলোর জিনসমূহের চেয়ে অনেক বেশি ছোঁয়াচে ও মারমুখী। সার্সের সাথে মিল থাকায় কোনো কোনো বিজ্ঞানাগারে এ ভাইরাসটির নাম বলা হচ্ছে সার্স-কোভিড-২।
যাই হোক, প্রকাশিত রিপোর্টসমূহ দেখার পর করোনাভাইরাসকে একদম নতুন বলা যাচ্ছে না। এ ভাইরাস নিয়ে অনেক আগে থেকে গবেষণা চলে আসছে বলেই আমরা কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এর প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের একটা সুসংবাদ শুনেছি। কারণ ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের জন্য অন্ততঃ কয়েকদশক সময়ের দরকার। তথাপি, গবেষকদের মতে, সফলতা পেলে করোনা ভ্যাক্সিনই হবে সবচেয়ে কম সময়ে আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিন।
করোনার ধরণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডারসমূহ যা বলছে তা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রথম দিকে অবশ্য অপরীক্ষিত কথাবার্তা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। দেখুন, বি শ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে- এটি হলো নিউমোনিয়ার মতো রোগ যা সাধারণ ঠান্ডা (মারস) থেকে অতিমাত্রার শ্বাসকষ্টজনিত (সার্স) রোগের মতো হতে পারে, যা ছড়ায় হাঁচি-কাশির জলকণা (ড্রপলেট) থেকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া এ সংজ্ঞাটি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের উক্তির মতোই ভয়হীন ও আতঙ্কমুক্ত। কভিড-১৯ এর চেয়ে ছোঁয়াচে আরো ভাইরাস লোকালয়ে আছে তবে ওইসব ভাইরাসের কাজ শুরু করার গতি এত ধীর যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বহনকারীর এন্টিবডির সাথে যুদ্ধ করে টিকতে না পেরে তা নিঃশেষ হয়ে যায়। করোনা আবিষ্কারের বছরেই (১৯৬৫ সালে) ডা. বারুশ ব্লুমবার্গ তেমন একটি ভাইরাস আবিষ্কার করে নোবেল জয় করেন যার প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে প্রবল। আর সেটি হলো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। গভীর গবেষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক জানিয়েছিলেন যে- হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস এইডসের চেয়ে শতগুন বেশি ছোঁয়াচে (যা এখন এন,সি,বি,আই, পাবমেডসহ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত)। এর কারণ হলো এইডস ছড়ায় শুধু রক্ত ও যৌনরস থেকে কিন্তু হেপাটাইটিস-বি ছড়ায় রক্ত, যৌনরস, ঘাম, মুখ ও নাসারন্ধ্রের জলকণাসহ শরীরের সব তরল থেকে। এমন কি এও বলা হয়েছে যে হেপাটাইটিস-বিবাহী ব্যাক্তির বহিঃশ্বাসকণা (এক্সহেইল ড্রপলেট) থেকেও অন্য ব্যাক্তির কাছে এ ভাইরাস চলে যেতে পারে। তবে মারাত্মক হলেও এর দূর্বল দিক হলো- এই ভাইরাসটি কাজ শুরু করে খুবই ধীরগতিতে এবং সবলদেহী ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত হওয়ার আগেই এন্টিবডির সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রায়ই তা পালিয়ে যায়। সুখবর হলো এ ভাইরাসের মারমুখী বিস্তার রোধে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার এর ভ্যাক্সিন শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণ করছেন ও বয়স্কদের জন্যও তা কমমূল্যে বিভিন্ন হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে।
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া ও ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে মৌসুমি রোগ হিসেবে সাধারণ ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা কমন, যা নিয়ে মজা করে বিখ্যাত রম্যলেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন, ‘ঔষধ খেলে সেরে যাবে সাত দিনে, আর না খেলে এক সপ্তাহে’। তবে এ বাণী সবার জন্য নয়-শরীর যাদের রোগা তাদের আবার মাস গেলেও ছাড়তে চায় না।
বাংলাদেশের মৌসুমি সর্দি-কাশি-জ্বর নিয়ে আমার একটা প্রবন্ধ বছর তিনেক আগে একটা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। ওখানে আমি এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ভিটামিন-সি ও এন্টিবডি ঠিক রাখার উপর জোর দিয়েছিলাম। আসলে এন্টিবডি তথা ইমিউন সিস্টেম শক্তপোক্ত রাখাটা করোনাসহ সব ভাইরাস/ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধেই জরুরি। এমনকি টিবি ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রেও।
গতকাল (২৭মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন (যিনি নিজেও করোনা আক্রান্ত) কভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’র কথা বলেছেন। যা আশাপ্রদ বলেই সাড়া জাগিয়েছে। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের এনএইচএস, যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ও সিএনএন হেলথ ইত্যাদি ওয়েবসাইট করোনা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিচ্ছে। ভয় বা আতঙ্কে আপ্লুত না হয়ে এইসব নির্ভরযোগ্য তথ্যের উপর আশাবাদী হতে হবে। কারণ আতঙ্ক যে কত ক্ষতিকর তা কিছুদিন আগে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ‘গোখড়া সাপের ছোবলের আতঙ্কে ফাঁসির আসামির মৃত্যুর গল্প’ থেকে বোধ করি সবাই বুঝে গেছেন।
ওটা গল্প হলেও আতঙ্কের মানসিক প্রভাবটা তেমনই; এ বিষয়ে অসংখ্য প্রামাণ্য গবেষণা রয়েছে। এখন সাধারণ সর্দি-কাশিকে মানসিক আতঙ্ক দিয়ে চেপে করোনা পর্যন্ত নিয়ে যাবেন না যেন! আমরা পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে ঠুনকো কারণে আত্মহত্যার যেসব ঘটনা দেখি তা মানসিক বিষবাষ্পেরই উদাহরণ।
সুতরাং আতঙ্কিত না হয়ে জ্বর-কাশি-সর্দি, শ্বাস কষ্ট, গলা ব্যথা, শারিরীক দুর্বলতা এইসব লক্ষণ একসাথে থাকলে যেকোনো হেল্পলাইনে ফোন করুন। এখন বিভিন্ন হাসপাতালে হেল্পলাইন খোলা হয়েছে যাদের নম্বর ইতোমধ্যে আপনার হাতেও পৌঁছে যাওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ এর তাণ্ডবলীলার যে নয়া নয়া তথ্য দিচ্ছে তা নিত্য বর্ধনশীল। তবে আশার কথা হলো ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান জার্নাল লান্সেটের (উপরোক্ত) গবেষণা নিবন্ধে এবং ২০১০ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল যে এ জাতীয় ভাইরাস সাধারণত শীত ও বসন্ত মৌসুমে দেখা যায়। সেই হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সুখবর হলো এখানে বসন্ত প্রায় শেষ। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকার বসন্ত এপ্রিল-মে পর্যন্ত গড়াবে।
যাই হোক, যেহেতু আমরা জেনে গেছি যে- এর বিস্তার রোধের উপায় হলো সংক্রমণ ঠেকানো, সেহেতু আমাদের উচিত নিয়মকানুনগুলো মেনে চলা। মাস্ক পড়ার দরকার নেই একথা ঠিক না। ধরুন বাজারে গেলেন, ওখানে মাছের বাজারে এক ব্যক্তি জোরে হাঁচি দিলেন যিনি করোনা আক্রান্ত কিন্তু তিনি নিজে এখনো তা জানেন না। তার হাঁচির ড্রপলেট বাতাসে উড়তে থাকল আর আপনারা ১৫-২০ জন তা শ্বাসের সাথে নাকে নিয়ে নিলেন। কি ভয়াবহ! মাস্ক থাকলে তো এ ভয়াবহ অবস্থা হবে না। আর বাসায় গেলেতো অবশ্যই হাত ধুবেন। কারণ ওই ব্যাক্তির নাক দিয়ে হয়তো পানি ঝড়ছে যা তিনি বার বার হাত দিয়ে এখানে সেখানে মুছতেছেন যেখানে কোনোভাবে বাজারের অনেকের হাতই চলে গেলো। সুতরাং সব নিয়ম মানতে হবে। আর অন্যকে রক্ষার্থে ওই ব্যক্তির মতো অসচেতনতো হওয়া যাবেই না।
আরেকটা কথা, করোনাভাইরাস নিয়ে অনেকেই বলছেন যে এটা হলো বিশ্বব্যাপী মানবজাতির প্রতি প্রকৃতি থেকে দেয়া কোন সাবধানী সংকেত। আসলে এমনটা হতেও পারে। তাহলে ১৯১৮ সালের স্পেনিশ ফ্লু, ইউরোপের প্লেগসহ পৃথিবীতে যেসব রোগ বৈশ্বিক মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছিল এর সবই কি ছিল মানবজাতির প্রতি প্রকৃতির সাবধানী সংকেত? হ্যাঁ তাও হতে পারে। কিন্তু ওইসবের কোনোটাই এবারের করোনার মতো এত সাড়া জগায়নি। এখন ইন্টারনেট আছে বলেই এতটা হয়েছে।
এটা আশার কথা। কারণ বোধোদয় অবশ্যই ইতিবাচক। আস্তিক, নাস্তিক, ধার্মিক, বকধার্মিক সবার মুখেই এখন এককথা; আমাদের ভুলের কারণেই এমনটা হচ্ছে। ধর্ম ও ধর্মশালা নিয়ে দ্বন্ধ-যুদ্ধ পৃথিবীতে চলছে বছরের পর বছর ধরে। এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলসহ সেই সময়ের সাধুভাষী লেখকগণ লিখেছিলেন অনেক সুন্দর-সুন্দর, কড়া-কড়া কথা। এই সময়ে তাদের মতো এত সাহসী কথা বলার প্রয়াস আমি পাচ্ছি না। তবে তাদের লেখার অনুসরণে একটা গল্প বলতে পারি- জনৈক গ্রামে এক শিক্ষক ছিলেন, যিনি স্কুলের কোনো এক ক্লাশে তার এক বন্ধু ও এক শত্রুর ছেলেদ্বয়কে পড়াতেন। বন্ধুর ছেলের পড়াশুনায় মন বসত না। তাই পরীক্ষায় পাশের জন্য সে সারাদিন খুঁজে বেড়াত শিক্ষক কখন কোনো রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা করেন এবং দেখামাত্রই সালাম দিত। অন্যদিকে শত্রুর ছেলে পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত এবং শুধু স্কুলে দেখা হলে শিক্ষককে সালাম দিত। বন্ধু ভাবতেন, ছেলে পড়াশুনা না করলে সমস্যা নেই, পাশ সে করবেই কারণ স্বয়ং শিক্ষক তার বন্ধু। অন্যদিকে, শত্রু ভাবতেন, ছেলের এত পড়াশুনা করেও লাভ হবে না কারণ ওই শত্রু শিক্ষক তাকে ফেল করিয়ে দিবে। কিন্তু পরীক্ষার ফল দেয়ার পর দেখা গেল এর উল্টোটা। অবাক হয়ে দুই অভিভাবকই শিক্ষকের বাড়িতে আসলেন এবং দুজনেই প্রশ্ন করলেন- এটা কি হল?
শিক্ষক জবাব দিলেন –সুবিচার হল। বিশ্বস্রষ্টার সাথে এই শিক্ষকের মিল আছে। তিনি শুধু অন্তর আর কাজ দেখেন। আর তিনি থাকেন ভালো মানুষের অন্তরে সে যে-ই ধর্মেরই হোক না কেন তা দেখার দরকার তার নেই। কারণ সব মানুষ তারই সৃষ্টি।
এ তো গেল ধর্মের কথা। পৃথিবীর আর যে কয়টা বিষয়ে ব্যাপক অনিয়ম চলছে তা হলো –প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি মানুষের অমানুষিক আচরণ ও মানুষের সাথে মানুষের চলমান অনাচার ও বৈষম্য। গ্রামের দুষ্টু ছেলেদের দলে ভিড়ে কুকুর-বিড়াল মারার দুষ্টু উল্লাসে মেতে উঠার অভিজ্ঞতা বোধ করি অনেকেরই আছে। সেই কথা এখন চিন্তা করে দেখুনতো অন্তর কিভাবে হু হু করে কেঁদে উঠে! প্রকৃতির সব সৃষ্টির প্রতি এমন মানবিক উপলদ্ধি জাগানো দরকার। মানুষে-মানুষে অনাচার ও বৈষম্য রোধে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যেও ব্যাপকহারে চলছে ভণ্ডামি। চলমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ তো আছেই। সেই সাথে গরীব মানুষকে সহযোগিতার নামে পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন এনজিও ও সাহায্যকারী সংস্থা নিজেদের ভাগ্যকে যেভাবে আকাশ্চুম্বী করে তুলছেন তাও অস্বাভাবিক। আর তাই এগোচ্ছে না মানবতা। শিল্পবিপ্লব গ্যাছে কবে? এত বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থাপিত হয়েছে কত হাজার বিশ্ববিদ্যালয়?
‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর; মানুষের মাঝেই স্বর্গ নরক মানুষেতেই সুরাসুর’ এমন সুন্দর সুন্দর কবিতা লেখা হয়েছে কতশত? ষড়রিপু ও তার বিপরীতে থাকা মানবীয় গুণসমূহ নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হয়েছে কতবার? কিন্তু এখনো কেনো পৃথিবীর এই অবস্থা? আর তাই বুঝি এল করোনা?
এই করোনা মহামারিতে বসন্তের আকাশে তাকিয়ে আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাই আমাদের সমস্যা নিয়ে মহাকাশে সব মহামানবদের এক মহাসমাবেশ; যাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে গিটার একটা হাতে নিয়ে বব ডিলান গেয়ে যাচ্ছেন-
আর কত সময় গেলে পরে বুঝবে এইসব মানুষ?
ভালো-মন্দ বোঝার দায়িত্বটা যে আসলে তাদেরই।
আর কত সময় গেলে পরে বুঝবে এইসব মানুষ?
কুমতির সাথে সুমতির যুদ্ধে জয়ী হলেই হয় মানুষ।
আর কত সময় গেলে পরে বুঝবে এইসব মানুষ?
মানুষ শুধু তখনই হয় মানুষ
বাঁচতে যখন শিখে সে পরের জন্য।
ওহে বন্ধু দ্যাখো, এতদিন পরে এসব উত্তর আজ
বাতাসে ভাসে করোনার কণা হয়ে।।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক, প্রধান নির্বাহী- ফুল-পাখি-চাঁদ-নদী রিসার্চ এন্ড এডভোকেসি ফোরাম।