বস্তি বিহার

ড. আবুল হোসেন

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:৪০ পিএম

বস্তি শব্দটার ইংরেজি প্রতিশব্দ Slum। ইংরেজরা স্লাম শব্দটাকে ইতর শ্রেণির শব্দ হিসেবে বিবেচনা করতো। অর্থাৎ এ শব্দটার খুব একটা কদর ও প্রচলন ছিলো না। পূর্ব লন্ডনে অনেক আগে থেকেই কিছু নিম্ন শ্রেণির এবং গরিব লোকজন বসবাস করতো। পূর্ব লন্ডনে এই নিম্ন শ্রেণির লোকদের বাসস্থান এবং বাসিন্দাদের বোঝাতে জুতসই কোনো শব্দ ছিলো না।

১৮৪৫ সালে ব্যাক স্লাম (Back Slum) শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ নিম্ন শ্রেণির বা গরিব লোকদের বসবাসের জায়গা। আর এভাবেই বস্তি শব্দটির উদ্ভব ও প্রচলন প্রচলন শুরু হয়। বস্তি এখন বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝে নেই এখানে নিম্ন শ্রেণির গরিব লোকজন বসবাস করে। ধরে নেওয়া হয় যে, এখানে পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন; ঘনবসতি; নিম্ন মানের বাড়ি-ঘর ইত্যাদি। আসলে কি তাই? 

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএন-হ্যাবিটেট এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে বস্তি হলো কোনো শহরের ভগ্নদশাগ্রস্থ (run-down) এলাকা। যেখানে থাকে নিম্ন মানের বসতবাড়ি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্থায়ী নিরাপত্তার অভাব। পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বস্তির জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি এর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ বস্তিতে বসবাস করছে। ২০৩০ সালে বস্তির জনসংখ্যা আনুমানিক প্রায় ২০০ কোটিতে পৌঁছাবে (ইউএন-হ্যাবিটেট রিপোর্ট, ২০১৩)। 

বস্তি ছোট, বড়, মাঝারি নানা গড়নের হয়। অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বস্তির বসবাস। ৫-১০টি খানা (Household) নিয়ে একটা বস্তি হতে পারে। আবার কয়েক হাজার খানা নিয়েও বিরাট একটা বস্তি হতে পারে। বিশাল আকারের বস্তির কথা শুনলে অবাক হতে হয়। কেনিয়াতে একটি বস্তির নাম কিবিরা (Kibera)। সাত লাখ লোক বসবাস করে এই বস্তিতে। আফ্রিকা মহাদেশে এটিই সবচেয়ে বড়। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বস্তির নাম ওরাঙ্গী টাউন। পাকিস্তানের করাচিতে এর অবস্থান। প্রায় ১৫ লাখ লোক বাস করে এখানে। এশিয়া মহাদেশে এটিই সবচেয়ে বড় বস্তি। যদিও এর নামের সঙ্গে টাউনজুড়ে দেওয়া হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বস্তিটি ভারতের মুম্বাই শহরের সঙ্গে লাগানো। এর নাম ‘‘দারাবী’’। প্রায় ৯ লাখ মানুষ বসবাস করে এ বস্তিতে। এই দারাবী বস্তির ওপর বলিউড অনেক সিনেমা নির্মাণ করেছে। ১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বহুল আলোচিত সিনেমা হলো ‘চক্র’। শক্তিমান অভিনেতা নাসির উদ্দিন শাহ্ এবং স্মিতা পাতিল এ সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। কীভাবে মানুষ বস্তিতে আসে; কীভাবে চলে এখানকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা, এসব নানান চমকপ্রদ ঘটনা নিয়ে সিনেমাটির কাহিনী গড়ে উঠেছে। 

ভাবতেই অবাক লাগে পৃথিবীর অনেক দেশের জনসংখ্যা বড় বড় বস্তিতে বসবাসরত জনসংখ্যার চেয়ে কম। পাকিস্তানের বড় বস্তির (ওরাঙ্গী টাউন) জনসংখ্যা ব্রুনাই -এর চেয়ে তিনগুণেরও বেশি (৪ লাখ ৫০ হাজার ব্রুনাইর জনসংখ্যা)। আবার মুম্বাই -এর বস্তি ‘দারাবী’র জনসংখ্যা ভুটানের চেয়ে এক লাখ বেশি। (৮ লাখ ভুটানের জনসংখ্যা)। আর কেনিয়ার কিবিরা বস্তির জনসংখ্যা মালদ্বীপের জনসংখ্যার চেয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার বেশি (মালদ্বীপের জনসংখ্যা ৫ লাখ ৩০ হাজার)। 

বাংলাদেশেও বড় বস্তি আছে। যদিও তা কেনিয়ার কিবিরা এবং ভারতের মুম্বাই -এর দারাবী বস্তির তুলনায় ছোট। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বস্তির নাম ‘কড়াইল বস্তি’। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের সঙ্গে লাগানো এই বস্তিটি ১৯৫৬ সাল থেকে শুরু। বাংলাদেশ গণপূর্ত বিভাগ ও টেলি যোগাযোগ কোম্পানির ১৫০ একর জমির ওপর বস্তিটি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ বসবাস করে সেখানে।

বাংলাদেশে বস্তি অন্তত দুটি নামে পরিচিত। চট্টগ্রামে বস্তিকে ‘কলোনি’ বলা হয়। আর ঢাকাসহ সারাদেশে অবশ্য বস্তিকে ডাকা হয় ‘বস্তি’ (Slum)  নামেই। তাবৎ দুনিয়ার বস্তি নিয়ে আলোচনা এই ছোট পরিসরে হয়ত সম্ভব নয়। তাই এখন বাংলাদেশের বস্তি নিয়ে আলোচনায় মনোযোগ দেওয়া যাক। বস্তি শব্দটি জন্মলগ্ন থেকেই অসাম্যের প্রতীক। এখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিচু শ্রেণির লোক বাস করে। এ সবই বস্তির অবয়ব এবং বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক বিচারে বৈষম্য ও অসমতা (inequality) এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর একত্রে বসবাসকে নির্দেশ করে। তাই বস্তির সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য ব্যাপক। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (Bangladesh Bureau of Statistics) সর্বশেষ বস্তিশুমারি করে ২০১৪ সালে। এর আগে ১৯৯৭ সালে একটা বস্তিশুমারি হয়। এতে বস্তি বলতে ১০ বা ততোধিক খানা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সরকারি, আধা-সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন খালি জায়গাতে গড়ে ওঠা আবাসস্থলকে বলা হতো। তারও আগে ১৯৮৬ সালে একটি বস্তিশুমারি হয়। ওই শুমারি শুধু চারটি (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী) শহরে পরিচালিত হয়। ২০১৪ সালে শুমারিতে ১০টির পরিবর্তে পাঁচটি খানা থাকলেই বস্তি বলা হবে, এমন সংজ্ঞা দেওয়া হয়। এ শুমারিটি ছিল পূর্ণাঙ্গ শুমারি। বাংলাদেশের সব জেলা এ শুমারির অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং বস্তি হলো ৫ বা ততোধিক গুচ্ছ খানা যা বিক্ষিপ্তভাবে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সরকারি, আধা-সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন খালি জমিতে গড়ে ওঠে (বস্তিশুমারি, ২০১৪, বিবিএস)। 

বাংলাদেশে মোট বস্তি আছে তের হাজার নয় শত পঁয়ত্রিশটি। ঢাকা শহরে অর্থাৎ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে বস্তি আছে তিন হাজার তিন শত চৌত্রিশটি। আর চট্টগ্রাম শহরে ও জেলার অন্যান্য স্থানে বস্তি আছে দুই হাজার দুই শত ষোলটি। বস্তিবাসী মানুষের মোট সংখ্যা ২২,৩২,১১৪ জন। বাংলাদেশে মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা- ১১,৪৩,৩৩৭ জন পুরুষ ১০,৮৬,৩৩৭ জন নারী এবং ১৮৫২ জন হিজড়া। শতকরা হিসেবে বস্তিবাসীর ৫১.২৫% পুরুষ, ৪৮.৬৭% নারী এবং ০.০৮% হিজড়া। (২০১৪ সালের বস্তিশুমারি) 

বস্তিবাসী, যাদের বয়স ১০ বছরের কম তারা বাদে সবাই কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। দশ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের বস্তিবাসী মানুষ মূলত- রিকশা/ভ্যান চালক, পোশাক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল কর্মী, ছোট ব্যবসা, ছোট চাকরি, ফুটপাতে ব্যবসা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি (ফল, শাক-সবজি ইত্যাদি), ফেরিওয়ালা, কুলি-মজুর, গৃহকর্মী (বাসার কাজ) ও নির্মাণ শ্রমিক ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত। দেখা যায় ঢাকা বিভাগের বস্তিগুলোর ১৮.৩০% ও চট্টগ্রামের ১৮.৩৯% পুরুষ ও নারী পোশাক কারখানায়, ঢাকার বস্তির ১৭.৪২%, চট্টগ্রামে ১৫.৩৫%, খুলনার ১৬.০৭% এবং রাজশাহীতে ১৬.৪৯% বস্তিবাসী রিকশা/ভ্যানচালক। বস্তির নারীদের একটি বিরাট সংখ্যা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে এমন ধারণা ঠিক নয়। ঢাকা শহরের বস্তির মাত্র ২.৯২% নারী এবং চট্টগ্রামে মাত্র ১.৪০% নারী অন্যের বাসায় কাজ করে। বরং খুলনা এবং রাজশাহীর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। রাজশাহীর বস্তিবাসীর ৫.১০% নারী এবং খুলনাতে অন্যের বাসায় কাজ করে বস্তিবাসীর ৪.৪২% নারী। চাকরির দিকে ঝোঁকও আছে বস্তিবাসী জনগণের। ঢাকার বস্তিবাসীর ১৪.৭৫% নারী ও পুরুষ চাকরি করেন। চট্টগ্রামে আরো বেশি ১৫.৪৯% আর খুলনা ও রাজশাহীতে যথাক্রমে ১২.৬৩% ও ১২.৩১% বস্তিবাসী চাকরি করেন। বিশেষত ছোট ব্যবসার দিকে বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীর ঝোঁকটা বেশি। রংপুর বিভাগে বস্তিবাসী লোকজন ব্যবসা করতে পছন্দ করে সবচেয়ে বেশি। রংপুরের বস্তিবাসী লোকজনের ১৯.৪১% নারী ও পুরুষ ব্যবসা করে। রাজশাহীতে ১৮.৪৪%, খুলনায় ১৮.১১% বস্তিবাসী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বস্তিবাসী মানুষের ব্যবসা করার প্রবণতা কম। ১৫.২৬% ঢাকার বস্তিবাসী এবং ১৪.২২% চট্টগ্রামের বস্তিবাসী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। 

বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস অন্যের জমিতে। তবে বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকে তারা শহরে এসেছে, সেখানে অনেকেরই জমি আছে। জমিটা হয়তো নদীভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে, হয়তো শুধু এক চিলতে জমি আছে জন্মভূমিতে। আবার বিরাট সংখ্যক বস্তিবাসীর কোনো জমি নেই কোথাও। শহরের যেসব স্থানে বস্তি গড়ে উঠেছে, মোটা দাগে জমিগুলোর তিন ধরনের মালিক আছে। সরকারি জমির মালিক, সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান জমির ও ব্যক্তি জমির মালিক।

বস্তির প্রায় ৬৩% ঘর কাঁচা (টিনের দেয়াল ও টিনের ছাউনি), প্রায় ২৭% ঘর সেমি পাকা (দেয়াল, ছাউনি টিনের এবং মেঝে পাকা)। ঝুপড়ি ঘরের সংখ্যা মাত্র শতকরা ছয়টি (৬%)। 

সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪২.৫৮ ভাগ খানা পিট ল্যাট্রিন ব্যবহার করে; শতকরা ২৬ ভাগ খানা ব্যবহার করে স্যানিটারি জলাবদ্ধ ল্যাট্রিন; আর প্রায় ২৪ ভাগ খানা ব্যবহার করে টিন দ্বারা নির্মিত ল্যাট্রিন। বস্তিবাসীর ৫২.৫ ভাগ খানা তাদের খাবার পানি নলকূপ থেকে সংগ্রহ করে এবং ৪৫.২১ ভাগ খানা পানি সংগ্রহ করে ট্যাপ থেকে। 

বস্তির বয়স্ক নারী-পুরুষের একটা বড় অংশ তাদের জন্মভূমি অর্থাৎ যে এলাকা থেকে এসেছেন সেখানেই লেখাপড়া শিখেছেন। নিরক্ষরের সংখ্যাটাও বিশাল। বস্তিবাসী শিশু এবং বয়স্কদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে বেসরকারি (আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সংস্থা) সংস্থাগুলো। সরকারি পর্যায়ে বস্তিতে শিক্ষার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। সাত বছর এবং এর বেশি বয়সের বস্তিবাসীর শিক্ষা সংক্রান্ত একটা তথ্য উঠে এসেছে ২০১৪ সালের বস্তিশুমারিতে। দেখা যায় বাংলাদেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে শতকরা ৩৩ ভাগ লোকজন শিক্ষিত। এর মধ্যে ৩৫ ভাগ পুরুষ এবং ৩১ ভাগ নারী কোনো না কোনোভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। সাক্ষরজ্ঞান থাকলেই শিক্ষিত বলে গণ্য করা হয়। বস্তিতে হাইস্কুল এবং কলেজ থেকে পাস করা নারী পুরুষও আছেন। যদিও এদের সংখ্যাটা বেশি নয়।

বস্তিবাসীরা কেউ ভাড়ায়, কেউ নিজের ঘরে থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর গড়ে ওঠা বস্তির সবাই ভাড়া দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ঘর সর্বনিম্ন ১০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা ভাড়া। আর সরকারি ও আধা-সরকারি জমির ওপর গড়ে ওঠা বস্তিতে সব মানুষ ভাড়া দিয়ে বসবাস করে না। সরকারি এবং আধা-সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে ভাড়া দিয়ে থাকেন প্রায় ৬৫% বস্তিবাসী। আর নিজের বাড়িতে থাকেন ২৭% বস্তিবাসী। সরকারি এবং আধা-সরকারি জমিতে ২৭% বস্তিবাসী নিজের জমিতে থাকেন। এটা কি করে হয়। কিন্তু হয়। কারণ ২০১৪ সালের বস্তিশুমারি তথ্যই বলছে একথা। এই যে ২৭% লোক নিজের বাড়িতে থাকে অর্থাৎ সরকারি এবং আধা-সরকারি জমির মধ্যেই নিজের বাড়ি আছে ২৭% বস্তিবাসীর। এই ২৭% বস্তিবাসী শুধু বস্তিতে নিজের বাড়িতেই থাকে না, তারা বাড়ি ভাড়াও দেন (বস্তিশুমারি, ২০১৪, বিবিএস)। 

দিনে না হলেও রাতে আলোর প্রয়োজন সর্বত্রই। ব্যক্তি মালিকানাধীন বস্তিতে আলোর ব্যবস্থা করে বাড়িওয়ালা। বিদ্যুৎ লাইন থাকে ঘরে ঘরে। ভাড়াটিয়া বস্তিবাসী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করে। কিন্তু সরকারি খাস জমি এবং আধা-সরকারি বা সরকারি সংস্থার জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিবাসীর জন্য আলোর ব্যবস্থা কিভাবে হয়? এ প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে হলে ব্যাপক অনুসন্ধান জরুরি। এ সংক্রান্ত কিছু গবেষণা হয়েছে এবং তা আলোচনা করা এ স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। এখানে আমরা আলোর উৎসের পরিসংখ্যান সহজেই দিতে পারি। সিটি করপোরেশন এলাকায় যে বস্তিগুলো আছে তার প্রায় ৯৫% এর ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বস্তির ঘরগুলোর মালিক যারা তারাই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে। সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা বস্তিতে বিদ্যুৎ কে দেয় সে প্রসঙ্গ ভিন্ন।

রান্নার জ্বালানির উৎস প্রধানত- প্রাকৃতিক গ্যাস, কেরোসিন, বাঁশ-কাঠ ইত্যাদি। সিটি করপোরেশন এলাকায় বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪২% খানা রান্নার কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে। অর্থাৎ ৪২% ভাগ খানা গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে। তবে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (ঢাকা উত্তর) রানা আকবর হায়দারি বলেন, ‘পুরো কড়াইল বস্তিই চলছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে। সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলারও শিকার হতে হয়। এর পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত। যে কারণে অভিযান চালিয়ে লাভ হয় না’ (প্রথম আলো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। 

বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও প্রায় একই দশা। অল্প কিছু বৈধ সংযোগ ছাড়া পুরোটাই অবৈধ। ট্রান্সমিটার থেকে সরাসরি তার টেনে দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে বস্তিতে। প্রতি মাসে ৭০০ টাকা করে বিদ্যুতের জন্য পরিশোধ করতে হয় প্রতিটি খানাকে (দৈনিক প্রথম আলো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে বলা হয়, মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে মাসে চাঁদা আদায় হয় ১০ কোটি টাকা (দৈনিক প্রথম আলো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। কীভাবে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংযোগ আসে বস্তিতে আর প্রতি মাসে একটি বস্তি থেকে ১০ কোটি টাকা চাঁদা কে আদায় করে সে এক অন্য আলোচনা। 

বাংলাদেশের শহরগুলোতে বস্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বস্তি যেনো শহরের অংশ হয়েও অংশ নয়। বস্তি এবং শহর একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িত। নিম্ন আয়ের, শ্রমজীবী কিংবা ভাসমান মানুষের আবাসস্থল হলেও বস্তির সমাজ ও ক্ষমতা কাঠামো অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং সব ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এখানে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে ক্রিয়াশীল।

লেখক: ড. আবুল হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক,
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh