ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০১:১৬ পিএম
মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নতুন আবিষ্কৃত একটা অংশ সব ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির একটি গবেষক দল একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যার ফলে প্রোস্টেট, স্তন,ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সার সারিয়ে তুলতে পারে।
তাদের এই গবেষণা নেচার ইমিউনোলজি ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, যদিও এটা এখনো কোনো রোগীর শরীরে পরীক্ষা করা হয়নি কিন্তু সফল হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই কাজ এখনো প্রাথমিক ধাপে রয়েছে, তবে আবিষ্কারটি খুব উত্তেজনাকর।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। এটা ক্যান্সারের কোষ বা সেলকেও আক্রমণ করে।
বিজ্ঞানীরা খুঁজেছে 'অস্বাভাবিক' ও পূর্বে অনাবিষ্কৃত পন্থা যেটা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে টিউমারের উপর আক্রমণ করে।
তারা বলেন, মানুষের রক্তে আছে একটি টি-সেল। এটা একটা রোগ প্রতিরোধক সেল বা কোষ যা দিয়ে শরীর পরীক্ষা করে পরিমাপ করতে পারে যে কোন ঝুঁকি আছে কিনা যেটা দূর করা দরকার। পার্থক্য হল এই কোষটি বৃহৎ আকারে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
গবেষক অধ্যাপক অ্যানড্রু সিওয়েল বিবিসিকে বলেছেন, এটাতে সব রোগীকে চিকিৎসা করার একটা সুযোগ রয়েছে। আগে কেউ বিশ্বাস করেনি এটা সম্ভব হতে পারে। একটা কোষ দিয়ে সব ক্যান্সারের চিকিৎসার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। যেটাকে ইংরেজিতে বলে 'ওয়ান ইজ ফিটস্ অল' (one-size-fits-all)।
টি-সেলের 'রিসেপ্টর' আছে। রিসেপ্টর হল একটা সেল বা কোষ যেটা আলো, তাপ বা অন্যান্য উদ্দীপক বস্তুর প্রতিক্রিয়া পাঠাতে পারে। এর ফলে তারা রাসায়নিকের মাত্রাটা দেখতে পারে।
কার্ডিফের এই গবেষক দলটি রক্তের এই টি-সেল ও তার রিসেপ্টর আবিষ্কার করেছে। যেটা দিয়ে পরীক্ষাগারে বৃহৎ পরিসরে ক্যান্সারের সেল আবিষ্কার করা ও ধ্বংস করতে পারে। এসব ক্যান্সারের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, ত্বক, রক্ত, কোলন, স্তন, হাড়, প্রোস্টেট, ওভারি, কিডনি ও জরায়ুর ক্যান্সার।
জটিল হলেও এটা স্বাভাবিক টিস্যুকে প্রভাবিত করবে না। তবে আসলেই এটা ঠিক কীভাবে কাজ করবে সেটা এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
এই নির্দিষ্ট টি-সেলের রেসেপ্টর এমআরওয়ান নামে একটা অণুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করানো হয়েছে যেটা মানুষের শরীরের প্রত্যেক সেলের উপরিভাগে থাকে।
রিসার্চ ফেলো গ্যারি ডলটন বিবিসিকে বলেছেন, আমরাই প্রথম যারা বর্ণনা করছি একটি টি-সেল যেটা ক্যান্সার সেলের মধ্যে এমআরওয়ান খুঁজে পায়। এটা এর আগে করা হয়নি। এটা এবারই প্রথম।
টি-সেল থেরাপি আগে থেকেই রয়েছে। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধক থেরাপির উন্নয়ন এই ক্ষেত্রে অন্যতম উত্তেজনাকর অগ্রগতি। অতি বিখ্যাত উদাহরণ হল সিএআর-টি। এটা হল একটা জীবিত ওষুধ যেটা রোগীর টি-সেল খুঁজে বের করবে ও ধ্বংস করবে।
সিএআর-টির একটা নাটকীয় ফলাফল হতে পারে, যার ফলে যে রোগী মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে পারতো তাকে আগেই পুরোপুরি সারিয়ে তুলবে।
অন্যদিকে টি-সেলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার একটা পরিস্কার লক্ষ্য আছে যাতে ক্যান্সার ধরতে পারে এবং এটা ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়াতে যতটা সফলতা পেয়েছে টিউমার থেকে যে ক্যান্সার হয় সেটাতে সফলতা আনতে ততটাই হিমশিম খাচ্ছে।
গবেষকরা বলেন, তাদের টি-সেল রিসেপ্টর সার্বজনীন ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। -বিবিসি