হাসান শাওন
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:২১ এএম
চিত্র-কলা, কবিতা আর ভাস্কর্যের রাজধানী বলা যায় প্যারিসকে। যুগে যুগে অসংখ্য শিল্পী আরাধনা করেছে এই সেইন নদী পাড়ের জনপদে। প্যারিসকে এক কথায় বিশ্বের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবেও উল্লেখ করা চলে। চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এ শহরে লেগেই থাকে। তবে ইদানীং শুধু শিল্প সংস্কৃতির কারণে নয়, ব্যাপক মাত্রায় সবুজায়নের জন্য আলোচিত হচ্ছে প্যারিস।
তিলোত্তমা এই শহরটি যেন ঝুঁকে পড়েছে কৃষির দিকে। সবুজের দিকে এই ঝুঁকে পড়া সম্ভব হয়েছে প্যারিসের নাগরিকদের আপসহীন পরিবেশমুখী তৎপরতার জন্য।
প্যারিসের অন্ধকার গ্যারেজে চাষ হচ্ছে উন্নত মানের মাশরুম। সুউচ্চ দালানের ছাদে গড়ে উঠছে ছাদ বাগান। যার ফলে প্যারিসের অধিবাসিরা শুধু যে সবজি আর ফল পাচ্ছেন তা নয়। পৃথিবীর সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কার্বন নির্গমন মাত্রাও হ্রাস পাচ্ছে এমন উদ্যোগে।
প্যারিসের কৃষিবিষয়ক স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান সাইক্লোপনিকসের সিইও জ্যান নোয়েল গার্টজ মনে করেন, একটি পরিত্যক্ত গাড়ির গ্যারেজকে বা পার্ককে অনায়াসেই একটি অরগানিক ভূগর্ভস্থ খামারে রূপান্তর সম্ভব। এর ফলে পরিত্যাক্ত জায়গাটির যেমন সদ্ব্যবহার হবে। তেমনি এর মাধ্যমে পরিবারের নিয়মিত পুষ্টির জোগানও সম্ভব।
প্যারিস মাশরুম চাষ নতুন মাত্রা পেয়েছে। কংক্রিটের নিচে বিভিন্ন ধরনের নীরিক্ষা চলছে। বড় আকারের উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে অনেক স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠানের। শুধু চাষ করেই শেষ হয় না চাষিদের কাজ। প্রতিদিন কয়েকশ’ কিলো মাশরুম সাইকেলের মাধ্যমে পরিবহন করে পৌঁছে দেওয়া হয় ভোক্তাদের কাছে।
সাধারণ জনগণের মতোই এই মাশরুমের বিপুল চাহিদা রয়েছে প্যারিসের রেস্টুরেন্টগুলোতেও। ইতিমধ্যে সবুজায়ন, জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা এবং নগর কৃষিকাজের জন্য ১১৬ হেক্টর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রচুর দেয়াল ও ছাদে সবুজায়ন করা হয়েছে।
প্যারিসের এই সবুজায়নে বহুমাত্রিক লাভ হয়েছে। ফ্রান্সের অন্য শহরগুলো প্যারিস মডেল অনুসরণ করছে। একই সঙ্গে গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার প্যারিসে পর্যটক এসেছে সবচেয়ে বেশি। বদলে যাওয়া এই শহরকে এখন ভালোভাবে উপভোগ করতে পারছে প্যারিসের বাসিন্দারা। তারা প্রত্যাশা করে পৃথিবীর অন্য শহরগুলোও আমাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করুক। যে সবুজে মুক্তি সে সবুজ এখনো বিলুপ্ত নয়। এ সময়েরই প্যারিস তার সাক্ষী।