শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্তে অনড় জামায়াত

মতিঝিল শাপলা চত্বরেই আগামী শনিবার (২৮ অক্টোবর) জামায়াতে ইসলামী মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। মহাসমাবেশ সফল করতে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াত।

ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, বাংলাদেশের সংকটময় এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা পূর্বশর্ত। কিন্তু সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করার কোনো চিন্তাই করছে না।

তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ গোটা জাতি মনে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের সে দাবি পাশ কাটিয়ে যেনতেন প্রকারে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিনা ভোটের সরকার দলীয় বিবেচনায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছে। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে বিএনপির লোক আখ্যা দিয়ে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যাতে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে দেশে এক ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। জাতির প্রশ্ন দলীয় লোক বিবেচনায় বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? এটি শেখ হাসিনার দ্বিমুখী আচরণ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে অবহিত করেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন- জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। তার এই বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি। পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মুজিবুর রহমান বলেন, বিগত সময় অসংখ্যবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।

তিনি বলেন, গোটা জাতি আজ এক দফার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। এ অবস্থায় সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আমরা আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি এরই মধ্যে ঘোষণা করেছি। শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে এক দফা দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আন্দোলন বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের কোনো ধরনের উসকানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্র বিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //