জাতিসংঘ-অ্যামনেস্টি টুইট করেছে, বিবৃতি দেয়নি: তথ্যমন্ত্রী

হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বা অ্যামনেস্টির টুইটকে সংস্থা দুটির বিবৃতি হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আজ বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি যে, জাতিসংঘের এখানকার আবাসিক প্রতিনিধির টুইটকে জাতিসংঘের বিবৃতি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের টুইটকে তাদের বিবৃতি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বিনীত অনুরোধ জানাবো— এ ধরনের যেটি যা না, সেটিকে তা হিসেবে প্রচার করা-সংবাদ তৈরি করা অপসাংবাদিকতা।

গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমি তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বিনীতি অনুরোধ জানাবো, এই ধরনের ম্যাল ইনফরমেশন প্রচার করা থেকে আপনারা বিরত থাকবেন।

তথ্যমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি যদি একটি টুইট করি বা স্ট্যাটাস দিই, সেটি কি সরকারের বক্তব্য হবে? আমি তো তথ্যমন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কাজেই জাতিসংঘের এখানকার আবাসিক প্রতিনিধি কিংবা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি টুইটকে তাদের বিবৃতি কিংবা উদ্বেগ হিসেবে প্রচার করা সমীচীন না, অপসাংবাদিকতার পরিচয়। অনুরোধ করবো, এগুলো থেকে সবাইকে বিরত থাকতে, সতর্ক থাকতে।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা। একটি সুন্দর-সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছিল। নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে একজন প্রার্থীর ওপর হামলা প্রার্থীর ওপর হামলা পরিচালনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটাকে বিতর্কিত করা। এই হামলা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না এবং অনুচিত। আমরা গতকালই নিন্দা জানিয়েছি।'

তিনি বলেন, যারা করেছে, এটি সরকারি দলের ওপর কালিমা লেপন করার জন্য, নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সেটি করেছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। সেখানে কাদের ইন্ধন ছিল, যে প্রার্থীকে হেনস্তা করা হয়েছে তার পক্ষ থেকে উসকানি দেওয়া হয়েছে কি না সেগুলো তদন্তের বেরিয়ে আসবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কেউ টুইট করতে পারে। এটি জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া না। একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া। আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে এটি জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, সেটি সঠিক না। পশ্চিমবাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেটি নিয়ে তো সেখানকার আবাসিক প্রতিনিধি কিংবা আমাদের বাড়ি থেকে পাশের বাড়ি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ বা টুইট তো আমরা দেখি না!

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই এ রকম টুইট করা বা কিছু একটা বলা, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতি নাকগলানোর সামিল। 

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিএনপি সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও শান্তি  ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করা হয়েছে। বিএনপির এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য দেশে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করা। যেটি গতকাল আবার স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, তারা দেশের ৯টি জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। মিরপুর বাংলা কলেজে ছাত্রলীগের এক নেতার বাইক জ্বালিয়ে দিয়েছে, জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করেছে। তারা পৌরভবনেও হামলা চালিয়েছে। বগুড়ায় সাতমাথা মোড়ে বিএনপির যাওয়ার কোনও অনুমতি ছিল না। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে বাধ্য হয়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে। লক্ষ্মীপুরে সামাদ অ্যাকাডেমির সামনে আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষকে  উসকানি দিয়েছে। এভাবে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এটিই। আজ আবারও তারা পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। একইসঙ্গে আমাদের উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, দলটির বিরুদ্ধে আওয়ামী চেতনার পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ হচ্ছে রাষ্ট্রের। তারা কোনও দলের না। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যে দলেরই হোক, কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে— তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বগুড়াতে বিএনপির যেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিল না, সেখানে তারা যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা তো লিখিত অনুমতি নিয়েছে এবং কোন কোন রুট ব্যবহার করবে, সেটি তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি না করে ভিন্ন রুট ব্যবহার করে এবং যেখানে অনুমতি নেই, সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করে, পুলিশকে তখন ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //