ইতিহাস বলে পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না: ফখরুল

সরকার পতনের এক দফার যৌথ ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেন, এগুলো প্রাথমিক কর্মসূচি, এই ঘোষণার পর পদত্যাগ করুন। অন্যথায় বাংলাদেশের ইতিহাস বলে পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না। এবার যদি আঙুলে ঘি না ওঠে, তাহলে কী করে তা উঠাতে হয় তা বাংলাদেশের মানুষ জানে।

আজ বুধবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশে এই এক দফাভিত্তিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও একই কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির মিত্র দল ও জোট। 

কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৮ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা। ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টায় গাবতলী থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় যাত্রাবাড়ীতে পদযাত্রা শেষ হবে। পরদিন একই সময়ে কর্মসূচি হবে আব্দুল্লাপুর থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা পর্যন্ত।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছেন, শুধু তারাই নয়, যারা বাইরে আছেন তাদের প্রতিও আহ্বান জানাই—আসুন উত্তাল আন্দোলন গড়ে তুলে কতৃত্ববাদী সরকারকে হটিয়ে একটি নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণ করি।

বিএনপির মহাসচিব জানান, বিএনপির ঘোষিত আগের কর্মসূচি তরুণ্যের সমাবেশ ও মেহনতি মানুষের পদযাত্রা চলমান থাকবে।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সমাবেশস্থল নয়াপল্টনে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। দুপুরের আগেই এলাকার অলিগলিতে অবস্থান নেন তারা। কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ মোড় এবং পল্টন মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সমাবেশ ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ সময় সতর্ক অবস্থায় ছিল। 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও উত্তর-দক্ষিণের সদস্য সচিব যথাক্রমে আমিনুল হক ও তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান।

মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের আর সময় নেই। ঘোষণা দেওয়ার আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন। ঘোষণার পর ক্ষমতা থেকে কীভাবে তাড়াতে হয়, বাংলার জনগণ তা জানে।

তিনি আরও বলেন, একটি বিশেষ শ্রেণির পুলিশ এখন কাগজপত্র তৈরি করছে। উদ্দেশ্য—যাদের নামে মামলা নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া, আর যাদের নামে মামলা আছে তাদের মামলা ত্বরান্বিত করা। এসব মিথ্যা মামলায় কিসের বিচার করবেন, জনগণই আগামীতে আপনাদের বিচার করবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন জনগণ ছেড়ে আমি যাব কোথায়? আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, যাওয়ার অনেক জায়গা আছে। সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, আমেরিকা, বেগমপাড়া আছে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা নিজে নিজে যাবে না আমরা তাড়াব—সেটি প্রশ্ন। যদি আমরা তাড়াতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের তার পুরস্কার দেবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কেউ আমাদের রক্ত নিতে এলে আমরা তার পাল্টা রক্ত নেব।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আর যারা সেই নির্বাচনে যাবে, তারা ভোট চোরের সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা এ ধরনের নির্বাচনে সহায়তা করবে, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, মাঠ প্রশাসনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএসদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। ভালো হলো নামগুলো সব পেয়ে গেছি। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা কেউ পদে থাকতে পারবে না।

সভাপতির বক্তব্যে আমান উল্লাহ আমান বলেন, আজকে ঢাকার মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না করে আর ঘরে ফিরবেন না। সরকারের পতনের মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে জনগণ। তখনোই তারা ঘরে ফিরবে। ২০২৩ সালে জীবনের বিনিময়ে হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পেয়েছি স্বাধীনতা, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পেয়েছি গণতন্ত্র, আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।

আমান বলেন, বিএনপির কোনো নেতাকর্মী আর জেলে যেতে চায় না। আর যদি মামলা দেওয়া হয়, তাহলে নারী-পুরুষ সবাই আদালতে হাজির হব। জীবন দেব কিন্তু অবৈধ শেখ হাসিনাকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেব না।

প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আর গুলি চালানোর চেষ্টা করবেন না। হতে পারে সে আপনার আমার ভাই।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আব্দুস সালাম, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, রকিবুল ইসলাম বকুল, কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //