বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রেজা কিবরিয়া, অভিযোগ নুরের

গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হতে রেজা কিবরিয়া বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। আজ মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকেলে রাজধানীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে, গতকাল সোমবার রাতে দলীয় বৈঠক থেকে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। তারা একে-অপরের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।

পরে রাতেই দলটির আরেক নেতা রাশেদ খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করে জুলাইয়ে কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হয় নুরুল হক নুরের পক্ষ থেকে।

যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব পদ থেকে নুরুল হক নুরকে এবং ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খাঁনকে তাদের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে গণমাদ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। 

এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের নুরুল হক নুর বলেন, ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবরে এ দলের যাত্রা হয়। আমরা রেজা কিবরিয়ার ভদ্রতা, নম্রতা দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হই এবং তাকে দলে নিই। কিন্তু তিনি যে এতটা অরাজনৈতিক...শুরু থেকে দলের কার্যক্রমে সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না।

তিনি বলেন, আমরা খেয়াল করি তিনি দলের কার্যক্রমে যুক্ত না থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক অপতৎপরতায় যুক্ত। একটি তৎপরতা ছিল, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে মাসুদ করিম এবং এনায়েত করিম নামে পরিচিত দুজন এজেন্ট ব্যাংকক-কাঠমান্ডুতে বিরোধী দলের কিছু নেতাকে নিয়ে হোটেলে রাখে, মিটিং করে...তারা বলেছে যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটা সরকার হবে এবং রেজা কিবরিয়াকে সে সরকারের প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে। আমরা খোঁজ-খবর করে জানতে পেরেছি যে এটা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার একটা ফাঁদ বিএনপিকে ভাঙার জন্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উকিল আব্দুর সাত্তারের মতো বিএনপির দলছুট, পদবঞ্চিত কোনো নেতাকে নিয়ে আগামী নির্বাচনে যাওয়া...।

নুর আরও বলেন, প্রথম দিকে জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেছেন দুই-তিন মাসে সরকার পতন হয়ে যাবে এবং তিনি কয়েক মাস থাকবেন এর সঙ্গে এমনটা জানান। ২০১৯ সাল থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত এখনো উনি এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। আমরা যেটা জানি, মাসে এ প্রক্রিয়া থেকে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ পান।

রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তিনি মনোনয়ন বিক্রিও শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টির একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন বিক্রির জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছেন। এভাবে তিনি ৪০ জনের কাছে টাকা চেয়েছেন। তিনি এমন কিছু ছোট ছোট দলের কাছে গিয়েও দল চালানোর জন্য টাকা চান। অথচ তিনি দলের কার্যক্রমে সক্রিয় না এবং খরচও করেন না।

আর্থিক লেনদেন নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ বিষয়ে নুর বলেন, আমাদের দলে আর্থিক কমিটি রয়েছে, তারা খরচের বিষয়টি দেখে। আমাদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। তা ছাড়া আমাদের দলের সবাই তরুণ, বেকার, এখানে দুজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি নাই যে আমাদের কোটি কোটি টাকা আসবে।

মেন্দি সাফাদি নামে জনৈক ইসরায়েলি এজেন্টের সঙ্গে বৈঠক করা বিষয়ে সাবেক ডাকসু ভিপি বলেন, এ অভিযোগ রেজা কিবরিয়া আগে কখনো তোলেননি। দলের মাসিক সভায়ও না। আমি আগেও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। ফটোশপ করে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

তবে ওই এজেন্টের সঙ্গে ৪০০ কোটি টাকা লেনদেনের হিসাব সরকারের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ‘সাইবার সেল’ চালাচ্ছে বলে নুর মন্তব্য করেন। রেজা কিবরিয়া ৪০০ কোটি টাকার কথা বলেননি বলে জানান নুর।

নুর আরও জানান, তারা কখনো ক্ষমতায় ছিলো না, খুব অল্প সময়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। ফলে কোনো বিদেশি সংস্থা কেন তাদের টাকা দেবে?

ইনসাফ কমিটির শনিবারের জমায়েত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির দলছুট ও পদবঞ্চিত নেতারা এখানে হাজার হাজার লোক সরবরাহ করছে। এর সঙ্গে রেজা কিবরিয়ার সম্পৃক্ততা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

নুরের অভিযোগ, ইনসাফ কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল না। তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠান করেছে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে। প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠান করেছে এক কোটি টাকা খরচ করে। এত ভালো মানুষ তো দেশে নাই যে নিঃস্বার্থভাবে দান করে দেবে। আমরা দুই লাখ টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাই, ইনসাফ কমিটি শেরাটনে ডিনার আয়োজন করে। নিশ্চয় আপনাদের বুঝতে হবে, এর পেছনের বড় ফিন্যান্সার আছে, বড় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে।

গণঅধিকার পরিষদ থেকে রেজা কিবরিয়া কর্তৃক অব্যাহতি প্রদান বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, তিনি দেশের বাইরে থেকে এই ধরনের অব্যাহতি বা পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এটা একটা মনগড়া পদক্ষেপ। গণঅধিকার পরিষদে তার কোনো ভিত্তি নেই। গণঅধিকার পরিষদ তরুণদের দ্বারা গঠিত সংগঠন।

তিনি আরও বলেন, গণঅধিকার পরিষদ তৈরি হওয়ার আগেই বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ছাত্র, যুব, শ্রমিক, প্রবাসী, পেশাজীবী সংগঠন তৈরি হয়েছে। তাতে রেজা কিবরিয়ার বিন্দুমাত্র কোনো অবদান নেই। সুতরাং তিনি গণঅধিকার পরিষদের সংগঠকদের বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিতে পারেন না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //