‘টাকা আয়ের জন্য বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ’

টাকা আয়ের জন্য আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে মহানগর বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অর্থনীতিকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে একে টেনে তোলা কঠিন।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের নামে সরকার মানুষের পকেট কাটছে। গুটিকয়েক মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ খাবার পায় না, হাসপাতালে চিকিৎসা পায় না অথচ উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু তৈরি করতে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে বড় বড় চুরির জন্য।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। বলেন, শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয় করার জন্য, চুরি করা জন্য। বিদেশি কোম্পানি আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তির জন্য দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হবে। বিদ্যুতের দাম হবে দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই। তারা এই দেশের সমাজকে দুই ভাগে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে সংবিধান ১৯৭২ সালে এই দেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারা বারবার কাটাছেঁড়া করে একটা অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রচনা হয় দেশের প্রথম সংবিধান। তাতে চার মূলনীতি ছিল: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। এর মধ্যে বিএনপি স্পষ্টতই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে নয়। এই সংবিধানের আলোকে ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় সে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে হয় তিনটি সংশোধনী। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে করেন একটি, তাকে হত্যার পর বিএনপির আমলে হয় আরও একটি।

তিনি আরও বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর সংশোধনী আসে চারটি। তার পদত্যাগের পর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হয়ে নির্বাচন শেষে আবার পদে পাওয়ার বিষয়টি বৈধতা দেওয়ার জন্য আসে আরও একটি সংশোধনী। খালেদা জিয়ার দুই বারের মেয়াদে সংবিধান সংশোধন হয় মোট তিন দফা। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হয় আরও তিনটি সংশোধনী। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের বিধানে ফিরে আসে। বিএনপি এর তীব্র বিরোধিতা করে।

১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের বদলে একদলীয় বাকশাল কায়েমের কথা তুলে ধরে এর তীব্র সমালোচনা করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে যে মৌলিক বিষয় ছিল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেটাকে ১৯৭৫ সালে তারা ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল গঠন করেছিল। যখনই তারা সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতায় আসার তখনই তারা সংবিধানকে ধ্বংস করেছে, তখনই তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হাত দিয়েছে, সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেছে, কণ্ঠরোধ করেছে সংবাদপত্রের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //