রথো রাফির গুচ্ছ কবিতা

রথো রাফির জন্ম- ১৯৭৫ সাল, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ পৈত্রিক নিবাসে। রসায়ন শাস্ত্রে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ গ্রহণ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি সংবাদকর্মী। গত শতকের ৯-এর দশকে তার কবি হিশেবে আত্মপ্রকাশ। তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন একটা দীর্ঘ সময় ছোটকাগজ আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটারারি স্কুলে। কখনও গ্রন্থ প্রকাশের প্রতি ছিল না তার মোহ, এ কারণে একদা গ্রন্থ ছাড়াই তিনি হয়ে ওঠেন এ শহরের কবি। লেখালেখির দীর্ঘ সময় পর গত ২০২০ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত তার প্রথম কবিতা গ্রন্থ- ‘অক্ষর ও বালির পৃথিবী’ পাঠকের নিকট আদৃত হয়েছে।

দেখা
একটি ধানের দানায়
আমি শত শত মানুষের
জন্ম-মৃত্যু দেখি
ফড়িংয়ের, ফিঙের
স্বপ্নের, দুঃস্বপ্নের
যেনো শেষ নেই
কৃষ্ণের বাঁশি, রাঁধার ব্যাকুলতা,
দুর্গার স্বপ্ন ও কালির ক্রোধ
যিশুর ক্রুশযাত্রা, বুদ্ধের বোধি,
মুসার নীলনদ পাড়ি
আর একই আকাশের
নিচে কত রঙের মেঘ
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাত
একটি ধানের দানায়
রাত, চাঁদ ও নক্ষত্র
আজও লক্ষ্য করি
অগণন জীবন ও সমাধি
আমার, তোমার, সবার!

প্রিয় দেশ

দেখাও তোমার প্রিয় দেশ, আমি কবি হয়ে উঠি!
যেনো বা অন্ধ হতে হতে হয়ে উঠি হোমার!
আর লিখে চলি দেহকাব্য থেকে ঝরে পড়া
আমাদের ময়ূর ইতিহাস! ধরো, এরপর
অন্ধের দেশে শুধু ময়ূরই রয়েছে, কোথাও চোখ
নেই আর! তবু হেরে যাবে না মানুষ! শিখে
নেবে, দেখার, কত শত নতুন কৌশল! মুগ্ধ
স্বর থেকে, মুখে মুখে তখন, ছড়িয়ে পড়বে
হোমারের পাতা থেকে, সেই শ্রুতিময় ইতিহাস,
শত শত অন্ধজনপদে! আর দূর কালের কত
মানুষ শুধু কান দিয়ে, দেখে নেবে শ্রুতিমুগ্ধ
ময়ূরের পেখম, সৌন্দর্য যার কাছে অলঙ্কার
নয়, সত্যি, জীবন! পোশাক নয়, সত্যি, হৃদয়!
দেখাও প্রিয় দেশ তুমি, অক্ষরে বুনি, অমরতা!

দরজা
মানুষ দরজা লাগিয়ে ঘুমায়। নিশ্চিন্ত বোধ করে।
এ কথা আজ হঠাৎ মনে হলো, এমন অশ্লীল!
কেন মানুষ বোঝে না, এতো আছে তার,
তবু কেন জগতে এমন কেউ থেকে যায়
যার কিছু নেই, কেন এমন কেউ থেকে যায় যে
লুট করার শংকা এমন গ্রাস করে তাকে,
তার পক্ষে দেখো প্রমাণ হাজির করতে হয় না
কখনও, চোর কি দেখতে পাই না আমরা অহরহ!
কেন তাকে আজও চুরি করতে হয়! এভাবে
কেন ভাবতে হয়, দরজাই প্রকৃত বাবা, তাকে
ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাবে, প্রকৃত মা,
তাকে শশ্রুষা দেবে, সত্যি আর-কেউ দেবে না!
কেন এমন হয়, যে আমার ইচ্ছে অন্যের ইচ্ছে
কেড়ে নেয়, আর ভাবি, ঠিক কাজটি করছি!
কেন কেউ চেয়ে প্রেম পায় না, পায় না ক্ষুদকণা!
অথচ তোমার এতো আছে, অথচ দ্বারে রোজ
সদা ভ্রমমাণ অচেনা ভিখিরি, এতো সভ্য আমরা,
এত সভ্য যে, ভিক্ষে দিয়ে করি জগত উদ্ধার!


বীক্ষণ
এ মুহূর্তে তুচ্ছ যা, তাই সবচেয়ে মূল্যবান
শুধু সময়, শুধু শ্রম,
শুধু ভাবনা,
একদিন একে
করে তুলতে পারে, মহামূল্যবান
কথা হলো, তুমি রাজি কিনা
কথা হলো,
এই যে প্রতিশ্রুতি তুমিও ভুলে যাবে কিনা
এ মুহূর্তে তাকে যদি চোখে না দেখো
দেখো, ক্ষুদেবীক্ষণে খুঁজে
দেখো, দূরবীক্ষণে খুঁজে
দেখো, কল্পবীক্ষণে খুঁজে
কথা হলো, খুঁজো,
কেননা, নিজেকে মূল্যবান
করে তোলাই, হয়তো বা, মহত্ব আসলে
শুধু মনে রেখো,
বীজের ভেতরে কোনোদিন,
পুষ্পকে দেখতে পাবে না,
মাটির গভীরেও না,
এমনকি কখনও,
গাছের শিরা উপশিরাতেও না
শুধু সে একদিন, বেরিয়ে আসে, আর
সেই গাছকে, করে তোলে, কী রঙিন!
ধরো, চোখ হারালে তুমি, তাই দেখতে পেলে না!

জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজা
মাঝে মাঝে আমার এমন মনে হয়
জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজাই পাপ
একেকটি উদ্দেশ্য যেনো মুক্তির ছলনায়
গড়ে তোলে একেকটি কারাগার
কারাগারের বাইরে যেতে চেয়ে
কেবল কারাগার থেকে কারাগারে
ছুটতে ছুটতে ফের মনে হয়,
জীবনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হওয়া চা-ই
না হলে কিছুতেই মুক্তি নেই
মনে হয়, জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজাই
সবচেয়ে মহৎ পাপ আমাদের!
ফের মনে হয়, জীবনের উদ্দেশ্য
কখনও ফুলের দিকে তাকিয়ে
আর ফুলকেই দেখতে দেয় না!
জীবনের উদ্দেশ্য যেনো কখনও
জীবনকেই আর নগ্ন দেখতে দেয় না
ভালো লাগার পেছনে ছুটতে ছুটতে
ভালো লাগাই কখন বন্দি করে ফেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //