মূল নকশা ধরে চলছে জাতীয় সংসদ ভবনের সংস্কার

একটা সময় জাতীয় সংসদ ভবনের চত্বরে কোনো সংস্কার কাজ করতে গেলে দেখা দিতো জটিলতা। কেননা সে সময় সরকারের হাতে ছিলো না সংসদ ভবনের মূল নকশা। তবে বর্তমানে সরকারের কাছে ভবনের মূল নকশা রয়েছে। এ কারণেই খুব সহজেই নকশাবহির্ভূত স্থাপনা চিহ্নিত করা যাচ্ছে। আর এতে বেগবান হয়েছে সংসদ ভবনের সংস্কার কাজ। তবে জিয়াউর রহমানের কবর নকশাবহির্ভূত স্থাপনা হলেও সেটি অপসারণের সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেই সংশ্লিষ্টরা এর অপসারণের কাজ করবেন। এটি ব্যতীত পুরোদমে চলছে সংস্কার কাজ।

উল্লেখ্য, সংসদ চত্বর থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর সরাতেই সংসদের মূল নকশা আনা হয়েছে বলে অনেকে মনে করলেও স্থাপত্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, জাতীয় সংসদে অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ করতে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার সংসদের মূল নকশা এনেছে।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদের যেসব নকশা সরকারের হাতে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় সেসবের বেশ কিছু নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া পুরো বিল পরিশোধ না হওয়ায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও সংসদের সব নকশা হস্তান্তর না করায় বাংলাদেশের কাছে পুরো নকশা ছিল না।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সংসদ ভবনে সংস্কার ও সম্প্রসারণকাজে সমস্যা হওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানোর পর ২০১৪ সালে তিনি সংসদের মূল নকশা আনার নির্দেশনা দেন। এরপর লুই আই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের সাথে যোগাযোগ শুরু করে স্থাপত্য অধিদপ্তর। নকশাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে সেখানেও যোগাযোগ করা হয়। সবশেষে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদের তিন সেট নকশা আনে সরকার। নকশার একটি করে কপি আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় সংসদ ভবন এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরে রাখা হয়েছে।

এখন মূল নকশা ধরে সংসদ ভবনে অবকাঠামোগত সংস্কারকাজ চলছে। নকশাবহির্ভূত স্থাপনাগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংসদ ভবনের ভেতর কাঠ দিয়ে কর্মকর্তাদের জন্য বেশ কিছু কক্ষ তৈরি করা হয়েছিল, নকশা ধরে সেগুলো ভাঙা হয়েছে। সংসদের ভেতর ও বাইরে যেসব স্থাপনা তৈরি করে সূর্যের আলো সঞ্চালনের পথ বন্ধ করা হয়েছিল, সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। মূল নকশা ধরে সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজার অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া উত্তর প্লাজায় স্থায়ীত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া লাল ইট বদলানো এবং উত্তর ও দক্ষিণ প্লাজার উপরিতলে পানিনিরোধী কোটিং বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নকশাবহির্ভূত যত স্থাপনা

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানের কবর সংসদ এলাকায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী শাহ আজিজ ও খান এ সবুরের কবর সংসদ এলাকা থেকে সরানোর দাবি দীর্ঘদিনের।

সংসদ এলাকার পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে আছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হওয়ার পর প্রথমে তাকে চট্টগ্রামে সমাহিত করা হয়। পরে সেখান থেকে কবর তুলে আনা হয় ঢাকায়।

উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই কান এ প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। 

১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ২০১৩ সালের ২ জুন সংসদ কমিশনের বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভবন সংরক্ষণে মূল নকশার সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু না করার বিষয়ে মত দেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //