শহীদ তিতুমীরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহান পুরুষ শহীদ তিতুমীরের আজ ১৯ নভেম্বর, শনিবার ১৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বাংলার প্রজাদের উপর স্থানীয় জমিদার এবং ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষে পরিচালিত আন্দোলনের নেতা ‘শহীদ তিতুমীর’।

তিতুমীরের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায় ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি। তার বাবার নাম সাইয়িদ মীর হাসান আলী ও মা আবিদা রোকাইয়া খাতুন। তার প্রকৃত নাম সাইয়িদ মীর নিসার আলী। তিতুমীর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন তার গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদরাসাতে লেখাপড়া করনে।

শহীদ তিতুমীরের পূর্বপুরুষগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। তিতুমীর ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর (রাঃ) এর বংশধর বলে দাবি করা হয়। 

তিনি ছিলেন কুরআনে হাফেজ, বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ এবং আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, তাসাওয়াফ ও মানতিক বিষয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিতুমীর একজন দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। 

প্রাথমিক পর্যায়ে তার আন্দোলনের লক্ষ ছিল সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার। মুসলিম সমাজে শিরক ও বিদআতের অনুশীলন নির্মূল করা। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল তার আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য।

তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগনা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। তন্মধ্যে বারাসাতের যুদ্ধ অন্যতম। উইলিয়াম হান্টার বলেন, ঐ বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন।

অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন, "ভাই সব, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়।

আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।"১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে।

তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেন নি।

১৯শে নভেম্বর তিতুমীর ও তার চল্লিশ জন সহচর শহীদ হন। তার বাহিনীর প্রধান মাসুম খাঁ বা গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বাশেঁর কেল্লা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //