নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা: জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। এবার বিরোধী দল কে হচ্ছে এবং পুরনো সরকার নতুন কী প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে তা নিয়ে যখন সর্বত্র আলোচনা, এর মাঝেই নতুন উদ্বেগের জন্ম হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতায়। কোথাও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর, আবার কোথাও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর, দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় দুজন নিহত এবং দুই শতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন বর্জন করে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সংঘাত এবং ট্রেন-বাসসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের মতো সহিংসতার ঘটনাও নিয়মিত হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে নির্বাচনের এক দিন আগে ঢাকার গোপীবাগে ভয়াবহ ট্রেন-নাশকতায় ৪ জনের প্রাণহানি দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু নির্বাচনের আগে শুরু হওয়া সহিংসতার এই ধারা এখনো চলমান থাকা স্বভাবতই উদ্বেগজনক।

এবার রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যেহেতু মোটা দাগে একই গোত্রের তাই মনে করা হয়েছিল নির্বাচনী সহিংসতা এড়ানো যাবে। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর থেকে জয়ী ও পরাজিত দুই পক্ষের মধ্যে কা-জ্ঞানবর্জিত সহিংসতার ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কতটা অসহিষ্ণু এবং অগণতান্ত্রিক মানসিকতার।

কেবল দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থেই নয়, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার জন্যও আমাদেরকে নির্বাচনী সহিংসতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনাগুলোর কোনো বিচার হয়নি। বরং নানাভাবে এর সত্যাসত্যকেই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যা পরবর্তীকালে এই ধরনের অপতৎপরতাগুলোকেই উৎসাহিত করেছে। তাই রাজনীতির নীতিনির্ধারকদের দলীয় স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থকেই মুখ্য হিসেবে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের মানুষের কাছে তাদের প্রতিটি কাজের জবাবদিহি থাকা জরুরি। 

আমরা আশা করব, সহিংসতায় জড়িতদের পরিচয় যা-ই হোক তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই যেন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার না হন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //