বিজয়ের মাস

বিজয়ের আলোয় উদ্ভাসিত তারুণ্য

বাংলাদেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল সবুজে আঁকা একটি দেশের নাম। বিজয় দিবস বাংলাদেশ ও বাঙালির জীবনে গর্বের আনন্দের আর অহংকারের। এ দেশের মানুষের কাছে স্বাধীনভাবে চলার, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি নাম বাংলাদেশ। এ এক পরম পাওয়া। আমরা এক সাগর রক্ত, অসংখ্য নারীর সম্মানের বিনিময়ে পেয়েছি এদেশের স্বাধীনতা। বিদেশি শত্রুর শৃঙ্খলের নাগপাশ থেকে মুক্তি পেয়ে অর্জন করেছি স্মরণাতীতকালের বিজয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার হাজার বছরের কাক্সিক্ষত বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। সেই থেকে পেয়েছি আমরা নিজেদের একটি দেশ, পরিচয়। তার পেছনে বারুদের মতো কাজ করেছিল তারুণ্যে ঝলসানো যুবক সমাজ যা ইতিহাসের পাতাকে উজ্জ্বল করে রেখেছে। সেই থেকে আমাদের বাংলাদেশের প্রতি মাতৃসম ভালোবাসা। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের, সকল প্রেরণার, অপার আনন্দ বেদনার অবর্ণনীয় অনুভূতি।

আজকের নতুন প্রজন্ম ইতিহাস পাঠে জানবে বাঙালি জাতির হাজার বছরের, পরাধীনতার ইতিহাস। যে পরাধীনতাকে ম্লান করে বুকের রক্ত ঢেলে, প্রাণ দিয়ে তখন যুদ্ধ করেছিল যারা, তারাও ছিল যুবক সমাজ। দেশাত্মবোধে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশ রক্ষায়। কোনো ভয়, লোভ দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারেনি পথভ্রষ্ট করতে। একান্ত ভালোবেসে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানবে সে ইতিহাস। স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার গৌরব অনুভব করবে নতুনরা। তাদের চেতনায় পৌঁছে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সভ্যতা। যাতে তরুণরা জানতে পারবে তাদের প্রকৃত পরিচয়। কেননা তরুণরাই তাদের মেধা, মনন ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে। তরুণরাই দেশ, জাতি ও সমাজের প্রাণশক্তি। তাই বিজয়ের অনুভূতি তাদের প্রতিটি ভালো কাজে অনুপ্রেরণা, নেতৃত্বে এগিয়ে আসার সাহস জোগাবে। সুতরাং সঠিকভাবে তরুণদের গড়ে তোলার দায়িত্ব হবে অগ্রজদের।

১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফন্ট নির্বাচনে জয় লাভ, ১৯৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ১৯৫৮-এর  মার্শল ল বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯-এর রক্তঝরা গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। বিজয়ের জন্য বাঙালিকে বেছে নিতে হয়েছিল নিরলস সংগ্রামের পথ। যে লাল সবুজের পতাকাটি অর্জন করতে ৩০ লাখ শহীদকে রক্ত দিতে হয়েছে, দ্ইু লাখ মা-বোনের সম্মান হারাতে হয়েছে, সেই বিজয়ের মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদেরই। আর সে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব অগ্রজদের।  আর এসব অন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন আমাদের জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

বঙ্গবন্ধু তরুণ বয়সে ছাত্রলীগ সংগঠন করে তরুণদের সঙ্গে যে আত্মার  আত্মীয়তা গড়ে তুলেছিলেন, সে বন্ধন তার আমৃত্যু কাটেনি। তরুণদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি গ্রহণ ছিল তার বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের প্রধান এক পর্ব। তরুণরাই ছিল  বঙ্গবন্ধুর নির্ভরতার প্রতীক।

প্রযুক্তির এই যুগে তরুণ সমাজ দাঁড়িয়ে আছে এমন এক প্রান্তে যখন তাদের হাতের মুঠোয় পৃথিবী। তাদের সামনে সুযোগ বেড়েছে, বেড়েছে চিন্তার প্রসারতা, তারা নতুন নতুন আবিষ্কারে এগিয়ে যাচ্ছে। এসবের মাঝে তরুণদের হৃদয়ে ‘বিজয়’ কেবল একটি শব্দ নয়, এ অনুভব বিশাল। এ বিজয়ের অর্থ কেবল একটি স্বাধীন দেশ নয়, সমাজের অর্থনৈতিক সমতা, শিক্ষার প্রসারতা। যেখানে থাকবে না দুর্নীতি, হাত পাতা মানুষের ভিড়, ছিন্নমূল মানুষের ক্রন্দন। এই তরুণরাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরাবে এসব জঞ্জাল। তরুণদের পক্ষেই সম্ভব মানবিক মূল্যবোধে বলীয়ান হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সার্থক করে তোলা। স্বাধীনতা যুদ্ধে যে বোধ তাদের কাজ করেছিল তাকে আবার জাগিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

ইতিহাসের শত বছরের শোষিত বাঙালি জাতি। যুগে যুগে শোষণের দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে আমরা মহান ৭১-এ এসে পৌঁছেছিলাম। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশের মানুষের নবজীবনের চলার সূচনা হয়। সে পথের নির্মাতা এই তরুণরাই। দেশের নানা সংকট, সম্পদে যারা এগিয়ে এসেছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, তারা এই তরুণ সমাজ। তরুণরাই এদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা।

অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, “তরুণদের কোনো বয়সসীমা নেই। সব বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়াই তারুণ্যের ধর্ম। বাংলাদেশ তারুণ্যের প্রতীক। তরুণরাই এনেছে এই দেশ। এ দেশ গড়বে তরুণরাই।” এই বিজয়ের মাসেই তরুণদের প্রতি প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। জয় হোক তারুণ্যের! জয় হোক বাংলাদেশের।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ভারতেশ্বরী হোমস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //