রাজনৈতিক কর্মসূচির লক্ষ্য হোক জনবান্ধব

আবারও নাশকতার রাজনীতির শিকার হলো সাধারণ মানুষ। চলন্ত ট্রেনে লাগানো আগুনে প্রাণ গেছে নিরীহ চার যাত্রীর। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল, সেখানে একমাত্র রেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

এতদিন বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য সড়ক পরিবহনে আগুন লাগানোর পর্ব চলছিল। সেই সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে আগুন লাগানো বা রেলপথের ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে নিরীহ যাত্রীর জীবন হরণের মতো ঘৃণ্য কাজটিও সংঘটিত হয়েছে। এ যেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। 

এই নাশকতা কে ঘটিয়েছে তা আমরা এখনো জানি না। কিন্তু রাজনীতির নামে সাধারণ মানুষের জীবন-মালের এই ক্ষয় আমরা মেনে নিতে পারি না। যথারীতি সরকারি দল হরতাল অবরোধকারীদের প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল সরকারি দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলছে বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে সুপরিকল্পিতভাবে নাশকতা ঘটানো হয়েছে। তারাও এ ঘটনার নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। আমাদের কথা হলো অপরাধ যেই করুক না কেন, নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলে কমপক্ষে ৪০টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানো হয়েছে ১১টি। সব মিলিয়ে এসব ঘটনায় ট্রেনের সাতটি কোচ পুড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও সাতটি কোচ। পাঁচ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

সারাবিশ্বে নিরাপদ বাহন হিসেবে রেলের সুখ্যাতি রয়েছে। সেই নিরাপদ যানবাহনটি এভাবে নাশকতার শিকার হলে সামগ্রিক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। যদিও জানা গেছে নাশকতা এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেনের গতি কমিয়ে এনেছে। ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য মোতায়েন হচ্ছে। ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার রেলপথে গুরুত্ব অনুসারে ট্রলি, গ্যাং কার ও লোকোমোটিভ দিয়ে সামনের পথ এস্কর্ট ও রেকি করা হচ্ছে। তারপরও নাশকতা কমছে না।

তাই আগুন দেওয়াসহ যে কোনো নাশকতার ঘটনা প্রতিহত করতে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রয়োজন পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কুইক ফায়ার ফাইটার সেফটি ব্যবস্থার পাশাপাশি ট্রেনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। সেই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে জনগণবান্ধব। দেশ ও মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তারা একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমাধানের পথে হাঁটবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //